যশোর প্রতিনিধি : যশোরের হামিদপুরে ইজিবাইক চালক মফিজুর হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক ফারজানা ইয়াসমিন এ আদেশ দেন। পাঁচ আসামির মধ্যে তিন আসামি রায় ঘোষনার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
তারা হলেন, যশোর সদর উপজেলার হামিদপুর বিশ্বাসপাড়ার মকছেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে ইকতিয়ার বিশ্বাস, মান্দার তলা গ্রামের বাসিন্দা ও মণিরামপুর উপজেলার লক্ষনপুর গ্রামের মৃত হাছিম সরদারের ছেলে খোরশেদ আলম, হামিদপুর দক্ষিনপাড়ার জালাল উদ্দিনের ছেলে কাজল। পলাতক আসামিরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার ধানঘাটা গ্রামের বলরামঘোষের ছেলে গোপাল ঘোষ,ও চাঁনপাড়া গ্রামের মফজেলের ছেলে এনামুল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পিপি আসাদুজ্জামান।
মামলা সূত্রে যানা যায়, ২০১১ সালের ২২ জুন রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মফিজুর রহমান তার হেলপার নয়নকে নিয়ে পুরাতন কেন্দ্রীয় বাস স্টান্ড (মনিহার মোড়) থেকে বাড়ির পথে ফিরছিলেন। এরমাঝে হামিদপুরে তার হেলপার নয়নকে নামিয়ে তিনি বাড়ির দিকে চলে যান। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়না। ২৪ জুন সকালে হামিদপুর ময়লাখানার পাশের একটি পুকুর থেকে মফিজুর রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তিতে এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আয়েশা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, মফিজুর ও তার হেলপার নয়ন যখন বাড়ি ফিরছিলেন ঠিক সেসময় একটি নাম্বার থেকে মফিজুর রহমানের কাছে কল আসে। পরে মফিজুরকে নয়ন জিজ্ঞাসা করে কে ফোন করেছিলো। এসময় মফিজুর নয়নকে জানান তাকে টাকা দেয়ার জন্য ইকতিয়ার কল করে ময়লাখানার সামনে ডেকেছে। এই বলে সুলতানা ফিলিং স্টেশনের সামনে ইজিবাইক থেকে নেমে যায় মফিজুর। নয়নকে ইজিবাইক নিয়ে চলে যেতে বলে। এসময় নয়ন দেখতে পায় পাশের একটি মেহগনী বাগানের সামনে ৪/৫জন যুবক দাড়িয়ে ছিলো। এরপর থেকেই নিখোঁজ হয় মফিজুর।
এছাড়া মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, মফিজুর ইজিবাইকের ভাড়ার টাকা পেত নিয়ে ইকতিয়ারের কাছে।এছাড়া, গোপালের স্ত্রী সুমিতা হত্যার ঘটনায় মফিজুর হাজতে ছিলো। জেল থেকে রেব হওয়ার পর গোপাল মফিজুরকে খুন গুমের হত্যা দিয়েছিলো। মফিজুরের স্ত্রী দাবি করে ইকতিয়ার ও গোপাল ষড়যন্ত্র করে তার স্বামীকে হত্যা করে লাশ পুকুরের মধ্যে ফেলে রাখে।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ক্লুলেস এ হত্যা কান্ডের তদন্তের শুরুতেই ইকতিয়ার ও খোরশেদকে আটক করে। একে এক বেরিয়ে আসে রহস্য। পরে তারা আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে উঠে আসে অপর তিন আসামিদের নাম। মুলত পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় মফিজুরকে। পরবর্তিতে লাশ ফেলে দেয়া হয় ঝুমঝুমপুর ময়লাখানার পেছনের একটি পুকুরে। যা পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।
মামলাটি তদন্ত করে কোতোয়ালি থানার এসআই নাসির উদ্দিন আদালতে চার্জশিট জমা দেন। সোমবার মামলার রায়ঘোষনার দিনে বিচারক পাঁচ আসামিরই মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন।
এ রায়ে সরকার পক্ষে পিপি আসাদুজ্জামান সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে এ রায়ের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে মন্তব্য করেন।