ফসলি জমি হুকুম দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন, হুমকির মুখে মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেল খনন কাজ

মোঃ এনামুল হক, মোংলা প্রতিনিধি: দেশের দ্বিতীয় মোংলা সমুদ্র বন্দরকে সচল রাখতে পশুর নদীর নৌ চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নাই। এ জন্য ২০২০ সালে একনেকে অনুমোদন হয় ৯৯২ কোটি টাকার ড্রেজিং প্রকল্প। পরে সেই প্রকল্প অনুমোদন হলে ২০২১ সালের মার্চ মাসে বন্দরের পশুর নদীতে ড্রেজিংয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ ড্রেজিংয়ের আওতায় পশুর নদীর ২৪ কিলোমিটার নৌ পথ খননের প্রয়োজন হয়।
তবে ড্রেজিং কাজের প্রথমে ২৪ কিলোমিটার নৌ পথ খননের ৩০ শতাংশের বেশি কাজ করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জায়গা না মেলায় বাকি থাকে ৭০ শতাংশ খনন কাজ। খনন কাজের পুরোটাই এখন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই অনিশ্চয়তা থেকে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলতে গত বছর পশুর নদীর পাড়ের দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা এলাকায় বিকল্প জায়গা খুঁজে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলা শুরু হলে স্থানীয় কৃষি জমির মালিকদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তিন ফসলি কৃষি জমিতে কোন রকম বালু মটি ফেলতে দেওয়া হবেনা, এমন দাবিতে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে ড্রেজিং কার্যক্রম স্থগিত করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে সরে আসে। তবে আবার নতুন করে জায়গা নির্ধারণ করা হয় মোংলা উপজেলার বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্দা এলাকায়। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। মাটি ফেলতে ২৬২ একর কৃষি জমি হুকুম দখলের ঘোষণায় জমির মালিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
কৃষিজমি হুকুম দখলের প্রতিবাদে ‘জমি দেবোনা, প্রয়োজনে রক্ত দেব’ এমন প্লাকার্ড নিয়ে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাস্তায় দাড়িয়ে যায় সহস্রাধিক নারী পুরুষ। এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় মোংলা-খুলনা মহাসড়কের দিগরাজ বাজারে মানববন্ধন করেন সানবান্দা এলাকার জমির মালিকরা।
এসময় বক্তব্য রাখেন কৃষি জমির মালিক বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আ’লীগ নেত্রী হোসনেয়ারা মিলি, বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ্বাস, ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি অর্ধেন্দু শেখর, পৌরসভার ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার, যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি প্রাণেশ সরকার ও সিপিবি নেতা সুশান্ত দাশ।
মানববন্ধনে তারা বলেন, ‘হুকুমদখল করে তাদের প্রায় ৩শ’একর জমিতে বালু ফেলে ভরাট করা হলে চিংড়ি ও কৃষি চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে। পেশা হারিয়ে নিঃস্ব হবে শত শত পরিবার। কোনও ভাবে এই জমি ছাড়বোনা। জমি দিবোনা, প্রয়োজনে রক্ত দিবো’।
এদিকে তাদের এই প্রতিরোধে নতুন করে মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেল খননে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে ৯৯২ কোটি টাকার ড্রেজিং কার্যক্রম। এসব উল্লেখ করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ড্রেজিং প্রকল্পের প্ররিচালক মোঃ শওকত আলী বলেন, ‘মোংলা বন্দরকে সচল রাখতে হলে পশুর নদীর ড্রেজিংয়ের বিকল্প নাই। ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জায়গা না পেলে নতুন করে আবারও সংকট তৈরি হবে। এতে মোংলা বন্দরের ক্ষতির পাশাপশি দেশের অর্থনীতিরও ক্ষতি হবে।