নির্দেশ উপেক্ষা করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বাড়ছে অবৈধ স্থাপনা: জড়িত প্রভাবশালী চক্র

মাজহারুল ইসলাম রানা
নগর প্রতিনিধি, চট্রগ্রামঃ
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রায় সব স্থানেই গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা।লোক দেখানো কিছু উচ্ছেদ হলেও বরাবরই রয়ে যায় দখলদারদের নিয়ন্ত্রনে। রেলের জমি দখল কে কেন্দ্র করে বাড়ছে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ, ঘটছে হত্যাকান্ডেরও মত ঘটনা। অপরাধ বাড়ার পেছনে রেলের ভু-সস্পত্তি বিভাগের কিছু রেলকর্মচারীদের লোভ কে দায়ী করছে অনেকে।
চলতি বছরে রেলের অবৈধ জায়গা ধকল কে কেন্দ্র করে ঘটে গেছে বেশকিছু অপ্রিতিকর ঘটনা। অবৈধ স্থাপনায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয় বেশ কয়েক জন রেলকর্মচারী, এমন ঘটনায় নড়ে চড়ে বসে রেলওয়ে কর্তৃকর্তারা। ঢাক ঢোল পিটিয়ে উচ্ছেদে গেলেও তা রক্ষা সংরক্ষণের অভাবে একসাপ্তাহ মধ্যেই আবোর যায়গা দখল করে নেয় দখলদাড়রা।
রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে বেশির ভাগ স্থান দখলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের। পাহাড়তলী এলাকায় রেলের যায়গায় গ্যারেজ নির্মান আশপাশ দখল কে কেন্দ্র করে ঘটিত সংঘাতে ফরিদ নামের এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনাও ঘটে। পুলিশের অভিযানে অভিযুক্ত হত্যাকারীর কয়েকজন আটক হলেও ঘুমিয়ে আছে ভু-সম্পত্তি বিভাগ, নেয় সেই জায়গা পুনরুদ্ধার এর কোন উদ্যোগ। স্থানীয়রা জানান পাহাড়তলী স্টেশনের সামনের পুরো জায়গাটিই দখল হয়েছে ভু-সম্পত্তি বিভাগে কর্মরত সালামের সহযোগিতায়। বেশ কয়েকবার তাকে দখল চলাকালীন অবস্থায় দখল কৃত স্থানে দেখা যায়, কিন্তু ভূসম্পত্তি বিভাগ দখল উচ্ছেদ করেনি। তাদের নিরবতায় উচ্ছেদ কৃত পুরো জায়গা দখলে চলে যায়। এবিষয়ে সালামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে খুলশীথানাধীন টিকেট প্রিন্টিং প্রেস কলোনীর ৫ ও ৬ নং কলোনির পিছে দুই রেলকর্মচারী ও সাবেক কাউন্সিলর এর অনুসারী বাবুল সিন্ডিকেট রেলের বিশাল যায়গা দখলে নেয়। দখল চলাকালীন অবস্থায় বেশ কিছু গনম্যাধ্যম কর্মীরা মহা-ব্যাবস্থাপক পূর্ব জাহাঙ্গীর আলম কে অবগত করেন। তিনি প্রাধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তাকে ব্যাবস্থা নেয়ার নির্দেশের প্রায় এক মাস গত হলেও নেওয়া হয়নি কোন ব্যাবস্থা পরিলক্ষিত হয় নি।
বিভাগীয় প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, "এভাবে উচ্ছেদ করা সম্ভব না।আমরা সিস্টেম অনুযায়ী উচ্ছেদ করবো।" এভাবেই পূর্বাঞ্চলের রেলের খালি জায়গা গুলো হরিলুট চলছে, বিভাগীয় কার্যালায় পাহাড়তলীতে অথচ এই এলাকাটিতেই কিছুদিন পর পর দখল বানিজ্যের মহড়া চলছে। বাদ জাচ্ছে না শহীদ শাহজাহান মাঠের মত ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠের আশপাশ, আমবাগান পূবালী মাঠে গড়ে উঠেছে গার্মেন্টস। আমবাগান ঢাকার লাইন নামে পরিচিত রেললাইন পাশ ঘেষে গড়ে উঠে স্থাপনা, পাহাড়তলী ঝীলেড়পাড়, পাহাড়তলী পুলিশ বিট এলাকার রেলওয়ে সেল ডিপো সংলগ্ন স্ক্রাব কলোনীতে রেলের জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা গুলোর বেশিরভাগই যেন মাদকে ব্যাবসার অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। নগরের প্রানকেন্দ্র টাইগার পাস ঘুরাইন্না গেট হতে মোড় পর্যন্ত রাস্তার পাশ ঘেষে রেলের যায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ দোকান, জুয়ার বোর্ডসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা থেকে প্রতি মাসে ১০ লক্ষের অধিক পরিমানে চাদা আদায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুল প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন রেল যতক্ষন পর্যন্ত জায়গা গুলো উচ্ছেদ না করবে ততক্ষন পর্যন্ত জায়গা গুলো নিরাপদ করা আসলেই অসাধ্যকর। তারা সুযোগ দিচ্ছে বলেই স্থাপনা গুলো গড়ে উঠছে। পাহাড়তলীতে বসবাস রত সাইফুল নামের এক রেল কর্মচারী জানান, "জায়গা দখল নতুন কিছু না!দখলদারা জায়গা দখল করে বিক্রি করে এর পর ভু-সম্পত্তি বিভাগ উচ্ছেদ করে। আবারো দখলদাররা দখল করে বিক্রি করে।দখলদার ও রেল ভু-স্পত্তি বিভাগের যেনো অঘোষিত নিরব সম্পর্ক।"
চারিদিক জুড়ে রেল এলাকায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠায় এলাকাগুলো হারাচ্ছে তাদের মনোরম পরিবেশ। প্রতিটি এলাকা হয়ে উঠছে বিষাক্ত। চুরি ডাকাতি ও সন্তানরা মাদকের প্রতি আসক্ত হওয়ার ভয়ে বরাদ্দকৃত কোয়াটার ভাড়া দিয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে অসংখ্য রেল কর্মচারীর।