ভিসা নিষেধাজ্ঞায় সবার উদ্বেগের কিছু নেই
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ শুধু প্রশাসন নয়, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার ক্ষেত্রেই প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তারা। এজন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আলাদা করে উদ্বেগে থাকার কিছু নেই বলে মনে করেন তারা।
তাদের মতে, গড়পড়তায় সবার জন্য এই নীতি হুমকি হবে না। কেবল যারা চাকরি শেষ করে আমেরিকায় পাড়ি জমাতে চান কিংবা যাদের ছেলেমেয়ে এখন আমেরিকায় থাকেন- তাদের কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে সমস্যায় পড়তে পারেন। আর এ সংখ্যাটাও কম, কারণ সরকারি আমলাদের মধ্যে সামান্য অংশই আমেরিকায় যান।
গত শুক্রবার বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গত প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা কাছে এই সব মন্তব্য করেন।
এর আগে গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। এতে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে বাধা দেওয়া হলে সংশ্লিষ্টদের ভিসা দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়।
এর ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে জানান, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী বাংলাদেশিদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবৃতিতে বলা হয়, যাদের ওপর এ ভিসানীতি প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রশাসন ক্যাডারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন ভিসানীতি কি শুধু আমলাদের জন্য? এটি নিয়ে কেন এত বাড়াবাড়ি? আর কোনো দেশে কি এমনটি হয়?
কোনো একটি দেশ তার ভিসানীতি কী করবে, করবে নাÑ এটা তাদের নিজস্ব ব্যপার। এ নিয়ে আমরা (আমলারা) কোনো বক্তব্য দিতে পারি না। আমরা সরকারের কর্মচারী। আমাদের যে দায়িত্ব, সেটিই পালন করে যেতে হয়।
মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে সবার উদ্বেগের কোনো কারণ দেখছেন না বলে জানান সদ্য অবসর নেওয়া একজন সচিব। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেন, ‘স্যাঙ্কশন’ ইস্যুটিতে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বপালনের সঙ্গে জড়িতদের কথা বলা হয়েছে। তার মানে এটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ নিয়ে শুধু প্রশাসনের উদ্বেগ থাকবে কেন? এর সঙ্গে যারা আছেন, সবার ভাবনায় থাকা উচিত।
সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, কত শতাংশ সরকারি আমলা মার্কিন ভিসা নেন? নিশ্চয় এর সংখ্যা খুবই সামান্য।
এর সঠিক তথ্য ওই দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলতে পারবে। এর বাইরেও অনেক শ্রেণিপেশার মানুষ আছেন, যারা ওই দেশে থাকেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা থাকে লেখাপড়া করে, ইত্যাদি। এখানে প্রশাসনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বড় করে দেখানোর কিছু নেই।
তার কথায় সহমত পোষণ করে সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, এটা (স্যাঙ্কশন) নিয়ে প্রশাসনের সবার উদ্বেগের কারণ আমি দেখি না। যারা অবসরে গিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমাবেন।
যাদের ছেলেমেয়ে ওখানে থাকে, তাদের চিন্তা থাকতে পারে। আর সরকারি চাকরি করে সন্তানকে আমেরিকায় লেখাপড়া করানো সম্ভব না, যদি অবৈধ আয় না করেন। সুতরাং তাদের উদ্বেগ থাকতে পারে।
এ বিষয়ে এক জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, সরকারের অন্য দপ্তরের মতো আমরা এ বিষয়ে বিবৃতি দিতে পারি না। আমরা সরকারের কর্মচারী। নির্বাচন এদেশে আগেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা দেবে নির্বাচন কমিশনকে। তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ফোরামে আশ^স্ত করার চেষ্টা করছে যে দেশে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।