গোলাপগঞ্জে অতিমাত্রায় লোডশেডিং, জনজীবন অতিষ্ট

জাহেদুর রহমান জাহেদ, গোলাপগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি: সিলেটের গোলাপগঞ্জে অতিমাত্রায় লোডশেডিং এর কারনে, জনজিবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিনয়ত। গ্রীষ্মের খরতাপ এখনো কাটেনি, অন্যদিকে বিদ্যুতের যাওয়া-আসার খেলা।
গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড গরমের সাথে পাল্লা দিয়েই যেনো বাড়ছে লোডশেডিং। ভ্যাপসা গরম ও ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অস্বস্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ মিলছে গোলাপগঞ্জে।
আবার ঘণ্টায় ৪ থেকে ৫ বার লোডশেডিংও হচ্ছে। এদিকে আবার বিদ্যুত ঘাটতি দূরীকরণে রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন ক্ষতির মুখে।
অতি মাত্রার লোড শেডিংয়ের কারণে যেমন হাপিয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ তেমনি ক্ষতির মুখোমুখি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককেই ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে।
উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে সকল দোকানপাট (জরুরী সেবা ব্যাতীত) রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। কিন্তু সকাল থেকে রাত ৮টা অব্দি ৬ থেকে ৭ঘণ্টা বিদ্যুতই থাকে না। তাতে বিপাকে পড়েছেন বিদ্যুৎ নির্ভর ব্যবসায়ীরা। একে সরকারের নির্দেশনা অপরদিকে বিদ্যুতের ভেলকিবাজীতে রীতিমতো হাপিঁয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে বিদ্যুত সংশ্লীষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসস্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন। এ কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
সোলেমান আহমদ নামের স্থানীয় এক ব্যাবসায়ী জানান, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করতে হবে আবার দিনে ৬/৭ ঘণ্টা নেই বিদ্যূত সরবরার এভাবে কি ব্যবসা করা যায়? এতো ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মারার শামিল। তাছাড়া দোকানপাট বন্ধ করে রাতে বাড়ি গিয়েও ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনা। বেশিরভাগ সময় রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত ৩-৪ঘণ্টা লোডশেডিং।
দেশের সকল জায়গায় বিদ্যুৎ ঘাটতি কমাতে লোডশেডিংয়ের রুটিন করা হলেও গোলাপগঞ্জে কোন রুটিন বা নিয়ম মানা হচ্ছে না। এই গরমে দিন ছাড়াও সারা রাত ধরে লোডশেডিং হচ্ছে।
সারাদেশে এলাকাভিত্তিক দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের যে সময়সূচি দেওয়া হয়েছিল, তা এরই মধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। সরকারের ঘোষণা যেনো কাগজে কলমেই রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, প্রচন্ড গরমের কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের অনেকেই জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে স্থানীয় হাসপাতালসহ চিতিৎসা কেন্দ্রে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সেবাগ্রহীতার ভিড় বাড়ছে। সব মিলিয়ে প্রচন্ড গরম ও লোডশেডিংয়ে উপজেলার সর্বত্রই জনজীবনে নেমে এসেছে চরম অস্বস্তি ও দুঃসহ যাতনা।
উপজেলার কয়েকজন গ্রাহক জানান, দিনে ১০-১২ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। অন্য এলাকায় রুটিন থাকলেও গোলাপগঞ্জে মনগড়া ভাবে লোডশেডিং করে গ্রাহকদের উসকিয়ে তুলছেন পল্লী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা। আহমদ খাঁন রোডের এক ফার্মেসী ব্যবসায়ী জানান আমাদের দোকানের ফ্রিজে থাকা অনেক মূল্যবান ঔষধ নষ্ট হচ্ছে।
পৌর এলাকার গৃহিণী জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, সারা দিনে কতবার বিদ্যুৎ যায়, তার হিসাব নেই। এক সপ্তাহ ধরে শুধু রাতেই পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। গরমের কারণে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। বাচ্চাটার ঠিকমতো পড়াশোনাও হচ্ছে না।
রাব্বি হোসাইন নামের এক ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন,বাজারে জিনিসপত্রের দাম চড়া। মাসে মাসে বিদ্যুৎ বিল দিয়েও এখন গরমে বিদ্যুৎ মিলছে না। সবারই দুর্বিষহ অবস্থা। কাউকে কিছু বলার নেই। দিন নেই, রাত নেই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে গরমে হাঁপিয়ে উঠেছি।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে গোলাপগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার(ডিজিএম) গোপাল চন্দ্র শীব বলেন, চাহিদার তুলনায় অর্ধেক মেগাওয়াট আমরা পাচ্ছি। তাই বিদ্যুত সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যেখানে আমাদের ১৫ থেকে ১৬ মেগাওয়াটের চাহিদা রয়েছে সেখানে আমরা পাচ্ছি ৮থেকে ৯ মেগাওয়াট। বিদ্যুত চাহিদার থেকে অর্ধেক ঘাটতি থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এ সমস্যা থাকতে পারে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।