মাঙ্কি পক্স: যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি

মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই জরুরি অবস্থা জারি করা হয় বলে বার্তা সংস্থা এএফপি শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের ফলে মাঙ্কিপক্স মোকাবেলায় নতুন তহবিল দেওয়া হবে, এই রোগ সম্পর্কে নতুন তথ্য সংগ্রহের পথ খুলে দেবে, একই সঙ্গে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন করার অনুমতি দেবে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার কারণে সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হকুল সংক্রমণ ঠেকাতে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা দেন।
এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তদের বেশিরভাগই পুরুষ এবং এসব পুরুষ অন্য পুরুষদের সঙ্গে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী জেভিয়ার বেসেররা বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘সংক্রামক এই ভাইরাস মোকাবিলায় আমরা আমাদের পদক্ষেপ পরবর্তী স্তরে নিতে প্রস্তুত, এবং মাঙ্কিপক্সকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার জন্য আমরা সকল আমেরিকান নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
অন্যদিকে একই ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ প্রতিরোধ সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) ডিরেক্টর রোচেল ওয়ালেনস্কি বলেন, মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাবকে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ফলে এটি এখন থেকে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের তথ্যের প্রাপ্যতা আরও উন্নত করবে। আর সংক্রামক এই ভাইরাস মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে ওই তথ্য আমাদের সহায়তা করবে।
অবশ্য মার্কিন সরকার মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা নিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আগে এই ভাইরাসটি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলেও এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতেই রয়েছে।
সংক্রমণ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয় এবং নিউইয়র্কে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে মার্কিন প্রশাসন। মাঙ্কিপক্সের মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপও নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সকল স্তরে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য দুই উচ্চপদস্থ ফেডারেল কর্মকর্তাকে নিয়োগও করেছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, মার্কিন সরকার গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশজুড়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিনের ডোজ বিতরণ করেছে। ভ্যাকসিন নির্মাতা বাভারিয়ান নর্ডিক-এর কাছে আরও ২৫ লাখ ডোজ টিকার চাহিদার কথা জানিয়েছে বাইডেন সরকার।
এর আগে সংক্রমণ বৃদ্ধির জেরে গত জুলাই মাসের শেষের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মাঙ্কিপক্সকে গ্লোবাল হেলথ ইমার্জেন্সি বা বিশ্ব স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসাবে ঘোষণা করে। গত ২৭ জুলাই ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস সাংবাদিকদের বলেন, মাঙ্কিপক্সের এই প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। তবে সবচেয়ে ভাল পন্থা হল ঝুঁকির রাস্তা থেকে সরে আসা।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ‘নিজের জন্য ও অপরের জন্য নিরাপত্তা রাখা ও নিজের সেক্স পার্টনারের সংখ্যা কমানো’ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, এই বার্তা সেইসব পুরুষদের জন্য ‘যারা পুরুষসঙ্গীদের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হন।’
ডব্লিউএইচও’র প্রধান আরও বলেন, ‘যদি আমরা (যৌনসঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে) আর একটু সংযমী ও সচেতন হই, সেক্ষেত্রে এই রোগের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো সম্ভব। এই রোগ থেকে আত্মরক্ষা অনেকটাই নির্ভর করছে নিজের ওপর।’
উল্লেখ্য, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসজনিত অসুখ। স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটির দু’টি রূপান্তরিত ধরন রয়েছে— মধ্য আফ্রিকান ও পশ্চিম আফ্রিকান।
মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলো সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঠান্ডা লাগা এবং ক্লান্তি থেকে শুরু হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং সংক্রমণের পাঁচ থেকে ২১ দিনের মধ্যে যেকোনো জায়গায় উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
একবার মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে জ্বর হলে, প্রথমে বসন্ত (পক্স) রোগের মতোই একটি-দু’টি করে গুটি দেখা যায় শরীরে। এক থেকে তিন দিন পর তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো মুখ থেকে শুরু হয়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।