হিটার হৃদয় গত ২ থেকে ৩ বছর ধরে মোহাম্মদপুর এলাকায় ‘বিডিএসকে’ (ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং) গ্যাং এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। হৃদয় বিভিন্ন সময়ে লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করত। পাশাপাশি ‘বিডিএসকে’ গ্যাং পরিচালনা করত।
সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘বিডিএসকে’ গ্যাং এর প্রধান হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়সহ আটজন সদস্যকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে ফরিদপুর, রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ স্টেশন, মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ‘বিডিএসকে’ গ্রুপের লিডার শ্রীনাথ মন্ডল ওরফে হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়, রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন, রাসেল ওরফে কালো রাসেল, আলামিন ওরফে ডিশ আলামিন, লোমান ওরফে ঘাড়ত্যাড়া লোমান, আশিক ওরফে হিরো আশিক, জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের, সুমন ওরফে বাইট্টা সুমনকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আটক আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ‘বিডিএসকে (ব্রেড ডেঞ্জার স্ট্রং কিং) গ্যাং গ্রুপে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। এদের লিডার হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে গত দুই বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এর আগে গ্যাংয়ের সদস্যরা ‘সবুজ বাংলা গ্রুপ’, ‘টপ টেন গ্রুপ’ ও ‘ভাই বন্ধু গ্রুপ’ এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এসব গ্রুপের সদস্যরা স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ মাদকের কারবার করতেন। এ গ্যাংয়ের সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত।
র্যাব বলছে বিডিএসকে গ্যাংয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমে হৃদয়ের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন আটক রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন। তিনি স্থানীয় একটি স্কুল থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে অপরাধ কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে আদাবর এলাকায় রিকশার গ্যারেজে কাজ করতেন। এছাড়া রাসেল ওরফে কালো রাসেল গ্যাংয়ে কাজের পাশাপাশি লেগুনার হেল্পার বা কখনো লেগুনা চালাতেন।
আলামিন ওরফে ডিশ আলামিনের আদাবর এলাকায় অটো রিকশাচালক ছিলেন। জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের স্থানীয় একটি স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। আশিক ওরফে হিরো আশিক ও সুমন ওরফে বাইট্টা সুমন ‘বিডিএসকে’ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। আশিক ও জোবায়ের মোহাম্মদপুর এলাকায় এক সঙ্গে রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। সুমন মোহাম্মদপুর ও বেড়িবাঁধসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি চালাতেন।
র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক আসামিরা এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। আটক আসামিদের অধিকাংশের নামে মাদক, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাদের মধ্যে তিন থেকে চারজন কারাভোগও করেছেন।
র্যাব জানায়, গত ২৮ জানুয়ারি রাতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, সদরঘাট ও ফরিদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিডিএসকে (ব্রেড ডেঞ্জার স্ট্রং কিং) গ্রুপের লিডার হৃদয়সহ তার আট সহযোগীকে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ আটক করেছে র্যাব।
আটকরা অন্যরা হলেন- বিডিএসকে গ্রুপের সমন্বয়ক মো. রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন (২০), মো. রাসেল ওরফে কালো রাসেল (২৫), মো. আলামিন ওরফে ডিশ আলামিন (২১), মো. লোমান ঘাড় ত্যাড়া লোমান (২১), মো. আশিক ওরফে হিরো আশিক (১৯), মো. জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের (১৯) ও মো. সুমন ওরফে বাইট্টা সুমন (২০)।
অভিযান চালিয়ে বিডিএসকে গ্রুপের মোহাম্মদপুর আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি চাপাতি, একটি রামদা, একটি চাইনিজ কুড়াল, চারটি চাকু (বড় ও ছোট), দুটি হাঁসুয়া, একটি কাঁচি এবং একটি লোহার রড উদ্ধার করা হয়।