রাসূল (সাঃ) এর পিতা-মাতা জাহান্নামী বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস: এলাকায় উত্তেজনা

পরিতোষ দাস, মদন(নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পিতা-মাতা জাহান্নামী বলে ফেসবুকে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে) স্ট্যাটাস দেওয়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এ নিয়ে এলাকাবাসী দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনের ডাক দিলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের কদমশ্রী বড়হাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
কদমশ্রী গ্রামের মগবুল হোসেনের ছেলে আরমান বিন মগবুল (৩৮) এর একটি স্ট্যাটাসে (১৭ মার্চ) শুক্রবার থেকে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এতে আতংকের মধ্যে রয়েছে তার পরিবারের লোকজন ও স্বজনরা।
স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, আরমান বিন মগবুল দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ইসলাম বিরোধী কার্যক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। তার বাবা মগবুল হোসেন নিজ মহল্লা মসজিদের সভাপতি। কিন্তু তার ছেলে ওই মসজিদের পাশেই প্রায় ৩০ শতাংশ জমিতে ‘মাদানী মাসজিদ কমপ্লেক্স’ আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করেছে।
সেখানে তিনি এলাকার কিছু তরুন যুবকদের নিয়ে ইসলামের পরিপন্থি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলাম বিরোধী কাজ বন্ধের জন্য এলাকাবাসী কয়েকবার আন্দোলন করলেও কোন কাজ হয়নি। গত (১৯ ফেব্রুযারি) আরমান বিন মগবুল তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ( সামামিজ যোগাযোগ মাধ্যম) একটি স্ট্যাটাস দেন।
সেখানে তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পিতা-মাতা জাহান্নামী। তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তার এমন কর্মকান্ডে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গতকাল শুক্রবার এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলন শুরু করলে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে মদন থানার পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে আরমান বিন মগবুল ধর্মীয় অনুভূতির আঘাত দেওয়ার কারণে দুঃখ প্রকাশসহ ক্ষমা প্রার্থনা করে পুনরায় নিজের আইডি থেকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। এ ঘটনার পর থেকে তার পরিবার ও স্বজনরা আতংকে রয়েছে।
শনিবার দুপুরে কদমশ্রী গ্রামে গেলে দেখা যায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকার লোকজন আরমান বিন মগবুলের স্ট্যাটাস দিয়ে লিফলেট তৈরী করে তা বিতরণ করছেন । এ সময় স্থানীয়রা জানান, ‘আরমান বিন মগবুল একটি মহলের ছত্র-ছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। লোকজন (বিশেষ করে তরুণ সমাজ) যাতে তার প্রতি আকৃষ্ট হয় এর জন্য সে টাকা পয়সাসহ বিভিন্ন ধরণের মালপত্র বিতরণ করে থাকে।
তার এমন কার্যক্রম কোন জঙ্গী সংগঠনের নির্দেশ কি না? তার অর্থের উৎস কোথায়? এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানান তারা।’
আরমান বিন মগবুলের চাচা নূর হোসেন জানান, ‘আরমানের বাবা আমাদের মহল্লা মসজিদের সভাপতি। হজ পালনের জন্য তিনি সৌদি আরব গেছেন। আরমান যে মাদানী মসজিদ নির্মাণ করেছে সেখানে তার বাবাসহ আমরা কেউ নামাজ পড়তে যাই না। কারণ সে যে নিয়মে নামাজ পড়ায় আমরা এটা পছন্দ করি না।’
রাসূল (সাঃ) মাতা-পিতা জাহান্নামী স্ট্যাটাসের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ‘গতকাল থেকে আমরা খুবই আতংকের মধ্যে রয়েছি। এলাকার লোকজন যেভাবে ক্ষেপে আছে যে কোন সময় বাড়ি ঘরে হামলা করতে পারে।’
এ বিষয়ে আরমান বিন মগবুল মুঠোফোনে জানান, ‘রাসূল (সাঃ) এর মা-বাবার পরকালিন অবস্থা কি? এমন একটি হাদিস গত একমাস আগে আমার আইডি থেকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। যেখানে উল্লেখ করা হয় রাসূল (সাঃ) এর পিতা-মাতা জাহান্নামী। সেটা আমার কথা নয়, হাদিসের কথা।
এ নিয়ে এলাকার একটি মহল ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে আমার বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণ করছেন। তারা আমার নির্মানাধীন পাঠাগারের সাইবোর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।
আমার মসজিদ ভাঙ্গার চেষ্টা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে পুলিশের কথায় আমার আইডি থেকে আরেকটি স্ট্যাটাসে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি।’
তিনি আরো জানান,‘ আমি অপরাধ করে থাকলে আইন আমার বিচার করবে। লোকজন এভাবে অত্যাচার করলে আমার অধিকার আদায় করতে আমি আইনি সহায়তা নেব।’
এ ব্যাপারে গোবিন্দশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলাম খান মামুন জানান, ‘আরমান বিন মগবুল রাসূল (সাঃ) এর পিতা-মাতা জাহান্নামী উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় এলাকায় থাকলে তার প্রাণ রক্ষা করা কঠিন হবে।
জনগণ যাতে নিজের হাতে আইন তুলে না নেয় আমরা চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে এলাকাবাসী গণস্বাক্ষরে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেবন।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাওহীদুর রহমান জানান , আরমান বিন মগবুল একটি হাদিস তার নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেয়। এতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।