ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে অন্তত দেড় ডজন গোপন কোম্পানি খুলেছেন ব্যাংক-মাফিয়া সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম। ব্যাংক লুটের অর্থ পাচার করে ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এসব কোম্পানি খুলেছেন তিনি।
পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনা ও ব্যবস্থাপনায় গঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের অনুসন্ধানে এই ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে।
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ। ক্যারিবীয় অঞ্চলের এই দ্বীপপুঞ্জে কর্পোরেট কর, সম্পত্তি কর ও বিক্রয় কর নেই। বিনিয়োগকারীরা ব্যবসার গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার পান। এ কারণে শেল কোম্পানি বা গোপন কোম্পানি গঠন করে পরিচালনার অবাধ সুযোগ রয়েছে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে।
বাংলাদেশের কুখ্যাত ব্যাংক-ডাকাত সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম এই সুযোগটিই নিয়েছেন। ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে এস আলম ও তার পরিবারের অন্তত ১৮টি কোম্পানির খোঁজ পেয়েছে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনা ও ব্যবস্থাপনায় গঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স।
অর্থনৈতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার কাজী আখতার হোসাইন বলেন, “ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এর মধ্যে এস আলমই পাচার করেছেন ১০ বিলিয়ন।”
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০১১ সালের শেখ হাসিনার এই ক্যাশিয়ার দ্বীপতে ক্যানালি লজিস্টিকস নামে প্রথম একটি কোম্পানি নিবন্ধন করেন। এরপর একের পর এক কোম্পানি গঠন করেন এস আলম।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, “যখন একটা পুঁজি চলে যায়, সেই দেশের আইনি কাঠামোতে পড়ে যায়। সবাই চায় আমার দেশে পুঁজি আসুক। যে ফর্মেই আসুক, তারা দেখতে চায় না সেটা কিভাবে নিয়ে আসলো। সেগুলো এখন নিয়ে আসা খুব কঠিন কাজ।”
২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে ১০টি কোম্পানি নিবন্ধন করেন তিনি। এগুলো হচ্ছে- হানিওয়েল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, গোল্ডেন ট্রেইলস ইন্টারন্যাশনাল পিটিই, হ্যামিলটন ইন্টারন্যাশনাল পিটিই, হ্যাজেল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই, লিভোনিয়া পিটিই, লু শুই ইন্টারন্যাশনাল পিটিই, পিটসডেল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই, স্পিংফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল পিটিই, চিং শুই ইন্টারন্যাশনাল এবং ট্রিভোলি ট্রেডিং পিটিই লিমিটেড।
এরপর ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এস আলম আরও ৬টি কোম্পানি গঠন করেন এই ট্যাক্স হ্যাভেনে। সেগুলো হচ্ছে- আদাইর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, গ্রিনিচ ইন্টারন্যাশনাল, লিনিয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ম্যারিকো ইন্টারন্যাশনাল, ওয়েভপ্যাক ইন্টারন্যাশনাল ও জেনিতা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এছাড়া ২০১৯ সালের ২২ মে পিকক প্রোপার্টি হোল্ডিংস নামে আরেকটি গোপন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
ব্যারিস্টার কাজী আখতার হোসাইন বলেন, “পর্যাপ্ত এভিডেন্স দিয়ে আগে কোর্ট থেকে প্রমাণ করে রায় লাগবে। পাচারের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে যদি আমরা প্রমাণ করতে পারি যে অবৈধভাবে ওই টাকা বিদেশে গিয়েছে।”
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস ও ইউরোপে এস আলম গ্রুপের বিপুল বিনিয়োগের কথা জানা যাচ্ছে। সিঙ্গাপুরে এস আলমের শপিং মল, ৩টি হোটেল ও রিটেনল স্পেস, বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে এস আলমের।