ঢাকার তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে কংক্রিটের আচ্ছাদন
ঢাকা মহানগরীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে পাঁচটি প্রধান কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ভূমির আকৃতি পরিবর্তন। উন্নয়ন পরিকল্পনায় সবুজ ধ্বংস করে কংক্রিটের আচ্ছাদন বৃদ্ধির ফলে তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ভবনের নকশা তৈরির ক্ষেত্রে পরিবেশ ও জলবায়ু ধারণার অনুপস্থিতি; খাল, পুকুর জলাভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ; ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ; বায়ুদূষণে সৃষ্ট অতি ক্ষুদ্র কণা এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাসের কারণে রাজধানীর তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে ‘ঢাকায় দাবদাহ : নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দায় ও করণীয়’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার প্ল্যানার্স টাওয়ারে আয়োজিত এ সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।
সংলাপে বলা হয়, ঢাকা শহরে কয়েক দশক আগেও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ এলাকা ও জলাশয় বিদ্যমান ছিল প্রাকৃতিকভাবেই। কিন্তু গত দুই দশকে এ শহরের সবুজ যেমন কমেছে, ঠিক তেমনি মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে ধূসর এলাকা ও কংক্রিটের পরিমাণ যা নগর এলাকায় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে মারাত্মক হারে; বাড়ছে আরবান হিট আইল্যান্ডের প্রভাব।
২০১৯ সালে করা বিআইপির গবেষণা অনুসারে, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৯৯৯ সালে ছিল ৬৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। দশ বছরের ব্যবধানে ২০০৯ সালে এটি বেড়ে হয় ৭৭ দশমিক ১৮ শতাংশ; ২০১৯ সালে দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশে।
২০২৩ সালে বিআইপি প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, জলাভূমি নেমে এসেছে মাত্র ২.৯ শতাংশে। যদিও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ
জলাশয়-জলাধার থাকার কথা। এরই পাশাপাশি ভবনের নকশায় প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচলকে ব্যাহত করে দিয়ে আবদ্ধ ঘর, কাচ নির্মিত ঘর ও এসি ব্যবহারকে মাথায় রেখে ভবন নির্মাণের প্রবণতার কারণে মহানগরীতে তাপমাত্রা বাড়ছে।
পরিকল্পনা সংলাপে বিআইপি সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা মহানগরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তাপমাত্রা কমাতে মহানগরীতে বিদ্যমান প্রতিটি সবুজ ও জলাশয় এলাকা সংরক্ষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা অনুযায়ী, নগর এলাকায় সবুজায়ন বাড়াতে বৃক্ষরোপণ, বনায়ন বাড়াতে সবুজায়ন মহাপরিকল্পনা, গ্রিন-ব্লু নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা, গ্রিন ও ব্লু অবকাঠামো সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান এবং দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে জনগণকে প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
খাল-বিল-জলাশয়-জলাভূমি ও সবুজ এলাকা ধ্বংসকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং এতদসংশ্লিষ্ট পরিবেশ আইন ও অন্যান্য আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। নগর এলাকার প্রান্তে সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প গ্রহণ করা।
পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পুরো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির কথা বলা হলেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বেড়েছে। এর মূল কারণ- ঢাকা শহরের আশপাশের প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার এবং নগরায়ণের নামে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ।