জয়পুরহাটে পরকীয়ার জেরে নুরুন্নবী হত্যা মামলায় প্রেমিকাসহ ৫ জনের যাবজ্জীবন
মাশরেকুল আলম, জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার দক্ষিণ হাটশহর গ্রামে পরকীয়ার জেরে নুরুন্নবী হত্যা মামলায় পরকীয়া প্রেমিকা ও তার স্বামীসহ ৫জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বৎসর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রোববার দুপুরে জয়পুরহাটের অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক নুরুল ইসলাম আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- জয়পুরহাট শহরের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল শেখপাড়া গ্রামের মরিয়ম বেগম ওরফে রেখা, স্বামী শাহাদুল ইসলাম, শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাক, মোজাহার আলী ও রেজাউল ইসলাম।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর সোমবার বেলা আনুমানিক ২টার দিকে ক্ষেতলাল উপজেলার বড়ভাই শেখপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি। নুরুন্নবীর শ্বশুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান মেলেনি। কয়েকদিন পর অর্থাৎ ২০ নভেম্বর বেলা ১২টার দিকে নুরুন্নবীর ছেলেমেয়েরা লোকমুখে জানতে পারে। দক্ষিণ হাটশহর নাপিতের কুড়ির পূর্বপাশে কবরস্থানে পুরাতন একটি কবরের মধ্যে মানুষের পা দেখা যাচ্ছে। এরপর নিহতের পিতা উৎসুক মানুষের সাথে ওই কবর স্থানে গিয়ে দেখতে পান মৃত রহিমা বেওযার পুরাতন কবরের মধ্যে মানুষের পা দেখা যাচ্ছে। পা ও ছেলের পড়নের কাপড় দেখে নুরুন্নবীর মরদেহ শনাক্ত করেন তার পিতা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। আরও বলা হয় নিহতের পূর্বনিবাস একই উপজেলার বিনাই গ্রামে। নুরুন্নবী তার খালাতো বোনকে বিয়ে করার পর প্রায় ৩০/৩২ বছর ধরে শ্বশুর বাড়িতে
ঘর জামাই হিসেবে বসবাস করতো। সেখানেই মরিয়ম বেগমের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে মরিয়ম, তার স্বামী শ্বশুর ও প্রতিবেশী আরও দুজন নুরুন্নবীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে কবরস্থানের পুরাতন একটি কবরে রেখে আসে। এ ঘটনায় নিহত নুরুন্নবীর পিতা আলতাব মন্ডল বাদী হয়ে ২০০৫ সালের ২১ নভেম্বর ক্ষেতলাল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ৩০ জুন তৎকালীন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওসি আসাদুজ্জামান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে রবিবার আসামির উপস্থিতিতে আদালতের বিচারক এ রায় দেন।
মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন সরকারি কৌঁসুলি নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল (পিপি), শামসুল ইসলাম বুলবুল (এপিপি)। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান ও শহীদুল ইসলাম (১)।