আরেফিন বাদলের ৭৬ তম জন্মদিন আজ

কথাসাহিত্যিক আরেফিন বাদল জাতীয় পর্যায়ের একজন সফল ব্যাতিক্রমি ধারার কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার এবং গুণী গবেষক, প্রাবন্ধিক, সেইসঙ্গে একজন প্রবীণ সম্পাদক ও সাংবাদিক। ষাটের দশকের শেষ প্রান্ত থেকে অদ্যাবদি তিনি সাহিত্য চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
তাঁর রচিত ছোটগল্প, উপন্যাস ও গবেষণাধর্মী গ্ৰন্থ ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভে সক্ষম হয়েছে। এদেশে বেসরকারিভাবে নির্মিত প্রথম টিভি অনুষ্ঠান—[প্যাকেজ নাটক] 'প্রাচীর পেরিয়ে'-এর নির্মাতা ও প্রযোজক তিনি [১৯৯৪]।
আরেফিন বাদল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত জাতীয় পর্যায়ের পাঠক নন্দিত পত্রিকা— পাক্ষিক 'তারকালোক', মাসিক 'কিশোর তারকালোক', সাপ্তাহিক 'আগামী' ও মাসিক 'তারকালোক ডাইজেস্ট' পত্রিকাগুলোতে তিনি কম্পিউটারের মাধ্যমে বাংলা বর্ণমালা ( DTP)- এর বাংলাদেশে প্রথম বানিজ্যিক ব্যবহার শুরু করেন [১৯৯৭]।
কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও সংবাদ সংস্থায় সাংবাদিকতা ছাড়াও সরকারি চাকরিসূত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পত্রিকা পাক্ষিক 'প্রতিরোধ' ও বাংলাদেশ স্কাউট-এর মুখপত্র মাসিক 'অগ্রদূত'-এর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।
আরেফিন বাদল-এর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ: 'প্রসবোন্মুমুখ যন্ত্রণাবিদ্ধ' [১৯৭৮], 'আগামীকাল ভালোবাসার' [১৯৮০], 'Short stories' [১৯৮১], 'অন্তুর বর সাজা' [১৯৯০], 'নিত্যদিন কালগোনা' [২০০৪], 'মুক্তিযুদ্ধের গল্প' [২০১০], 'গল্প সমগ্র' [২০১৮] ইত্যাদি।
উপন্যাস: 'নিসর্গের সন্তানেরা' [১৯৮১], 'ইমুবাবু' [১৯৯৮], 'ঐ আসে আমিরালী' [১৯৯৯], 'সারা'র ব্রীজ' [১৯৯৯], 'হাকিম উদ্দিন তরফদার' [২০০১], 'অতঃপর একটি স্যুটকেস' [২০১৭], 'উপন্যাস সমগ্র' [২০১৮], 'এবং মাতৃত্ব' [২০১৯[, 'বিশ শব্দের গল্প' [২০২০]।
কিশোর গল্প: 'অন্তুর বর সাজা' [১৯৯০]। কথাসাহিত্যের বাইরে তার গবেষণা ও অন্যান্য গ্রন্থ: ' 'ঐতিহাসিক প্রেমপত্র', [১৯৭৬], [৩য় সংস্করণ], 'মওলানা ভাসানী', [১৯৭৭], [২য় সংস্করণ ], 'রবীন্দ্রনাথের জীবনে নারী', [১৯৯৯], [২য় সংস্করণ], 'চাষী-মজুরের মওলানা ভাসানী' [২০২২], 'বাংলাদেশ- ভারত কনফেডারেশন : একাত্তরে ইন্দিরাকে ভাসানীর চিঠি' [২০২৩]।
টিভি নাটক: 'কাছের মানুষ কাঁদে, [১৯৮৯], 'ঐ আসে আমিরালী' [১৯৮৯], 'ইমুবাবু' [১৯৯৭], আপন অস্তিত্বে'[২০০৭], 'নেতা ঘেমে যাচ্ছেন'[২০০৮] ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া আরেফিন বাদল-এর বর্ণাঢ্য "জীবন ও কর্ম" নির্ভর বিচিত্রধর্মী বিভিন্ন গুণীজনের তথ্য বহুল লেখা নিয়ে, টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থগার থেকে সবুজ মাহমুদ-এর সম্পাদনায় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ছয়শত পৃষ্ঠার 'আরেফিন বাদল সংখ্যা: যমুনা' গ্রন্থটি।
এই বইটিকে বিগত ৫০/৬০ বছরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সমকালীন বিভিন্ন প্রসঙ্গের নির্মোহ বিশাল তথ্যভান্ডরও বলা চলে। আরেফিন বাদল দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সেমিনার ও কনফারেন্সে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
আরেফিন বাদল তার নানামুখী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ 'ভাসানী পদক' [১৯৮৭], 'ময়মনসিংহ লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতি পুরস্কার' [২০০৬], বাচসাস কর্তৃক বাংলাদেশে বিনোদন সাংবাদিকতায় 'বিশেষ সম্মাননা' [২০১২], চ্যানেল আই কর্তৃক 'ফজলুর হক স্মৃতি পুরস্কার' [২০১৪], 'বাচসাস চলচ্চিত্র পুরুস্কার: ওবায়েদ-উল হক স্মৃতি পদক' [২০১৪], 'টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কার' [২০১৬], 'আনন্দ আলো সম্মানা' [২০১৬], ভাসানী পরিষদ কর্তৃক 'বিশেষ সম্মাননা পদক' [২০২২]-সহ দেশী-বিদেশী বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।
তিনি বাংলা একাডেমীর একজন 'আজীবন সদস্য'। আরেফিন বাদল ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঘাটাইলের পোড়াবাড়ি গ্রামে।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে' ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। আজ এই গুণী মানুষটির ৭৬তম জন্মদিন। আরেফিন বাদলের জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা।