সমাবর্তনে অতিরিক্ত ফি নিয়ে রাবি শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ
মাহবুব বিল্লাহ, রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তনে স্নাতক সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারছে না অন্যদিকে অতিরিক্ত রেজিষ্ট্রেশন ফি ধরা হয়েছে। এ নিয়ে অসন্তোষ শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়ে অর্থনৈতিক সংকট এবং দেশের অর্থনৈতিক মন্দার কথা তুলে ধরে সমাবর্তন ফি কমানোর দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
আগামী নভেম্বরে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে বলে বিজ্ঞাপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে সভাপতিত্ব করবেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ সাহাবুদ্দিন।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এ বিজ্ঞাপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তথ্যমতে, সমাবর্তনের রেজিষ্ট্রেশন ফি পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম এবং ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এমফিল, এমডি ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারীগণ অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে বিজ্ঞাপ্তিতে জানানো হয়। বিষয়টি নিয়েও চলছে আলোচনা সমালোচনা।
২০১৯ সালে রাবির একাদশ সমাবর্তনে ফি নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৩৫৭০ টাকা যেখানে অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি হওয়ায় অর্ধেকেরও কম গ্র্যাজুয়েট অংশ নিয়েছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২০১৭-১৮ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করা অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা এখনও চাকরি পায়নি। এমনকি যারা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের বেতনও আহামরি অনেক বেশি নয়। একজন সদ্য চাকরিপ্রাপ্ত বা চাকরিপ্রার্থী যুবকের জন্য পাঁচ হাজার টাকা অনেক বড় বিষয়। এই অর্থ সে কীভাবে জোগাড় করবে? যারা প্রাইভেট পড়ায় তাদের ক্ষেত্রে এই অর্থ অনেক বেশি। কেননা টিউশনির অর্থ দিয়ে একজন শিক্ষার্থী নিজের খরচ চালায়। কাজেই ফি আরও কমানো দরকার।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষ হলেই সমাবর্তন পায় কিন্তু রাবির শুধু স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারীরা সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবে সেটাও ২০১৭-১৮ সালে যারা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে বিষয়টি যুক্তিযুক্ত নয়।
পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মুবাশির তাসিন বলেন, সমাবর্তনের মত একটা প্রোগ্রামে মাস্টার্স না করলে অংশগ্রহন করতে পারবেনা এটা বেশ অপ্রত্যাশিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত নীতিমালা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের আরো ভেবে দেখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলো উদাহরণস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু অনার্স গ্রেজুয়েটদের কনভোকেশনে অংশগ্রহণ করতে দিচ্ছে, আমরা কেন পারছিনা? এতে করে আমরা যারা মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর করিনি, আমরা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
আরবি সাহিত্য বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রেজওয়ান গাজী মহারাজ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা স্নাতক শেষ করে জব করে অনেকে আছে যারা মাস্টার্স করে কেউ কেউ দেশের বাহিরে চলে যায় পড়াশোনা করার জন্য যারা সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করার জন্য আগ্রহী কিন্তু তারা অংশ নিতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে পড়াশোনা করে খাওয়া থাকাই কষ্টকর এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করাটা অসম্ভব ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে যেহেতু সময় আছে তাদের সব কিছু বিবেচনা করে স্নাতকদের অংশগ্রহণ ও রেজিষ্ট্রেশন ফি কমিয়ে সকল শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দেওয়া উচিৎ।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, অনার্সের সমাবর্তন প্রসঙ্গে একাডেমিক কাউন্সিলের যে সিদ্ধান্তটি ছিল, সেটি তখনকার প্রেক্ষাপটে নেওয়া হয়েছিল। আমরা এখনকার পরিস্থিতির উপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল আমরা আবার কাগজপত্রগুলো নিয়ে বসছি। একক সিদ্ধান্তে তো কোন কিছু পরিবর্তন সম্ভব না। কমিটির মিটিং এ যে সিদ্ধান্ত আসে সেটা জানানো হবে।