ঢাবিতে ‘জাপানের আধুনিকায়নে শিক্ষার উন্নয়ন’ শীর্ষক ৪র্থ জাইকা চেয়ার লেকচার অনুষ্ঠিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ এবং জাইকার যৌথ উদ্যোগে ‘জাপানের আধুনিকায়নে শিক্ষার উন্নয়ন’ শীর্ষক ৪র্থ জাইকা চেয়ার লেকচার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি।
এই অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডঃ এ এস এম মাকসুদ কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাইকা বাংলাদেশে অফিসের প্রধান প্রতিনিধি জনাব ইচিগুচি তোমোহিদে এবং মূল বক্তা ছিলেন জাইকা ওগাতা সাদাকো রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর পিস এন্ড ডেভলেপমেন্ট এর সিনিয়র রিসার্চ এডভাইসর ডঃ কায়াশিমা নোবুকো। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ডঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে জাপানের উন্নয়নের মডেল হতে পারে বাংলাদেশের অগ্রগতির সবচেয়ে ভাল পথ, জাইকা চেয়ার সেমিনারে বক্তারা এই মতামত পোষণ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপান যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং নিজেদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে অগ্রগতির চূড়ায় নিয়ে গেছে সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ তার নিজস্ব স্বকীয়তায় উন্নতি করতে পারে বলে মনে করেন বক্তারা। করোনা অতিমারির সময়ে যখন পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থবির, তখন বাংলাদেশের সামনে জাপানের মত করে ‘অর্থনৈতিক অত্যাশ্চর্য’ হওয়া সম্ভব। আর এ সম্ভাবনা তৈরির জন্য শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন বক্তারা।
ডঃ কায়াশিমা নোবুকো তারঁ বক্তব্যে জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাস এবং পৃথিবীতে শিক্ষার তৎকালীন ব্যবস্থায় জাপান কিভাবে এগিয়ে গেছে সে মাইলফলকগুলোতে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, এদো যুগ, মেইজি যুগ এমনকি বর্তমান সময়েও ইউরোপ আমেরিকা থেকে শিক্ষকদের আনা হয় শিক্ষাদানের জন্য। জাপান থেকে শিক্ষার্থীদেরও পাঠানো হয় বিভিন্ন দেশে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য, যেন তারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে পারে। এভাবে জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে তা জাপানের সার্বিক উন্নয়ন ও আধনিকায়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা থেকে শুরু করে তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষানুরাগের দিকে আলোকপাত করেন। তিনি শিক্ষায় বর্তমান সরকারের সজাগদৃষ্টি রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত কিভাবে শেখ হাসিনার সরকার পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তা ব্যাখ্যা করেন।
জাইকা বাংলাদেশ দপ্তরের প্রধান প্রতিনিধি জনাব ইচিগুচি তোমোহিদে তাঁর বক্তব্যে এই সেমিনারকে সফল করার জন্য জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি মনে করেন এটি কেবলমাত্র শুরু, জাইকা বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে অবদান রাখতে চায়। জাপান এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক মাতারবারি মহাপ্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নতুন টার্মিনাল স্থাপন সহ বিভিন্ন প্রকল্পে নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে এখন শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়নে আটকে না থেকে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা, লব্ধ জ্ঞানের উপস্থাপন ও অংশীদারিত্ব বাড়ানো এবং একাডেমিয়ার সাথে উচ্চতর সহযোগীতা স্থাপন করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন।
উক্ত সেমিনার উপস্থাপনা করেন জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব শিবলী নোমান।
সেমিনারের সভাপতির বক্তব্যে প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, জাপান বাংলাদেশের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বন্ধুরাষ্ট্র, যে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ভিশন ২০৪১—বাংলাদেশের উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার পথে সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছে। এই সেমিনার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ সরকার, নীতিনির্ধারক এবং একাডেমিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫ শতাধিক শিক্ষাবিদ, গবেষক, উন্নয়ন পেশাজীবী এবং শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান সাফল্যের সাথে সমাপ্ত হয়।