প্রেমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে প্রেমিকা কারাগারে, মারপিটের ভিডিও ফেসবুকে
মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে 'অনৈতিক বা পরকিয়া প্রেমের' সম্পর্কের জেরে স্বপন আলী (২৭) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে যুবকের মা সাহেরা খাতুন বাদী হয়ে পরকিয়া প্রেমিকা, তাঁর স্বামীসহ পাঁচজনকে আসামি করে কুমারখালী থানায় হত্যা মামলা করেন। এছাড়াও মামলায় আরো পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে মামলার প্রায় পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে বুধবার রাত নয়টার দিকে ঘটনার প্রধান হোতা পলাতক প্রেমিকা সুমাইয়া আক্তার সুমিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরআগে, গত বুধবার সকালে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া জালাল মোড় এলাকার আসাদুর রহমান আসাদের বাড়ির উঠানে ওই যুবকের হাত ও পা ভাঙা, মাথার চুলকাটা ও রক্তাক্ত লাশ রেখে খিচুড়ি রান্না করছিল সুমি। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে স্বপন আলীর সাথে কুমারখালী পৌরসভার জালালমোড় এলাকার আসাদের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সুমির সাথে 'অনৈতিক বা পরকিয়া প্রেমের' সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন। সেই সম্পর্কের জেরে স্বপন মাঝেমাঝে সুমির শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া আসা করত। এ নিয়ে অতীতে কয়েকবার সালিশি বৈঠক হয়েছে। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে স্বপন আবারো সুমির শ্বশুর বাড়িতে আসে। সেসময় সুমি ও তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
এদিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে স্বপনকে পেটানোর এক ভিডিও গত বুধবার রাতে ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। ভিডিওতে দেখা গেছে, ইয়াসিন নামে একজন স্বপনকে বেধরক মারপিট করছেন। সেই মারধরের দৃশ্য ভিডিও কলের মাধ্যমে সুমি তাঁর বাবা এনামুলকে দেখাচ্ছেন। আর এনামুল বারবার বলছেন দুইবিঘা জমি বিক্রি করে টাকা দেব। ওকে মেরে ফেল। টাকা যা লাগে লাগুক, ও যেন বেঁচে না থাকে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী সাহেরা খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে ওরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি থানায় মামলা করেছি। আসামিদের ফাঁসি চাই আমি।
সুমির শ্বাশুড়ি ফাতেমা খাতুন জানান, ওই ছেলে মাঝেমাঝেই বাড়িতে আসত। কয়েকবার সালিশও হয়েছে। তবুও সেদিন রাতে আসলে তাঁর ছেলের বউ লোকজন ডেকে এনে পিটিয়ে মেরেছে। তাঁর ভাষ্য, সুমির সাথে স্বপনের একটা সম্পর্ক ছিল।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম জানান, পরকিয়া প্রেমের সম্পর্কের জেরে যুবক পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান হোতা সুমিকে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।