ঝুপড়ি থেকে পাকা ঘর, স্বাবলম্বীর পথে সেই চায়না আক্তার
সোহানুর রহমান, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: বাঁশের ছাপরায় পরিবার নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে থাকতাম। প্রতিবছর তুফান এলেই ছেলে সন্তান নিয়ে ভয়ে বুক কাঁপত। জরাজীর্ণ ঘরে গুটিসুটি হয়ে না ঘুমিয়ে রাত পার করতে হতো। জোরা তালি দিয়ে দিন কাঁটলেও জরাজীর্ণ ঘরেই থাকতে হতো। হালকা ঝড় হলেও ঘরের ক্ষতি হতো। প্রতিবছর ঘর মেরামত করতে অনেক টাকা দরকার হতো। পাকা ঘরে থাকবো কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবি নাই। আমার কষ্টের জীবন শেষ। এখন আর সেইদিন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পাকা ঘর উপহার দিছেন। সাথে সরকারি সেলাই মেশিনও পেয়েছি।
আবেগাপ্লতু কন্ঠে কথা গুলো বলছিলেন খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের ০৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা চায়না আক্তার। তিনি রশিকনগর গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী মনির হোসেনের স্ত্রী।
তাঁর ভাষায়, ‘এখন আমার পাকা বিল্ডিং ঘর। দিনঠিকা কামলাও এহন দেই না। আর তুফানে চাল উড়াইয়া লইতেও পারতো না। সেলাইমেশিনের কামাই দিয়া সংসার চালে। আমার কষ্টের দিন শেষ।’
উপকারভোগী চায়না আক্তার দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে থাকতেন। চায়না আক্তারের স্বামী মনির হোসেন একজন বাকপ্রতিবন্ধী।
উপজেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে বিশেষ চাহিদার ভিত্তিতে চায়না আক্তারের নামে পাকা ঘর ও সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়।
এর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চতুর্থ ধাপে সারা দেশে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর উদ্বোধনের পর উপকারভোগীর মধ্য থেকে তিনি তাঁর দারিদ্রতার কথা জানান। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম এর নজরে আসলে চায়না আক্তারের হাতে তাৎক্ষনিক একটি সেলাই মেশিন তুলে দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের বারান্দায় বসে কাপড় সেলাই করছেন উপকারভোগী চায়না আক্তার। প্রতিবেশীরা জানান, সেলাই মেশিন পাওয়ার আগে স্বামী- স্ত্রী উভয় দিনমুজুরি করতেন। এখন চায়না আক্তার ঘরে বসেই কাপড় সেলাই করে টাকা উপার্যন করেন।
উপজেলার ১নং মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকী বলেন, ‘চায়না আক্তার একজন অসহায় নারী। তাঁর স্বামী বাকপ্রতিবন্ধী। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে চায়না আক্তারের স্বামীকে প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ- সুবিধা তিনি পেয়ে থাকেন। তিনি সরকারি ভাবে পাকা ঘর ও সেলাই মেশিন পেয়েছেন।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, ‘শুধু চায়না আক্তার নয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘরে উঠে খুশি অন্য উপকারভোগীরাও।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি উপকারভোগীদের ০২শতক করে খাস জমি বরাদ্দ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ , সংযোগ সড়ক সহ সাবলম্বী করতে চাহিদার ভিত্তিতে একাধিক অসহায় ও দুস্থ নারীদের মধ্যে সেলাই মেশিন প্রদান করা হচ্ছে।’