"পেটে ক্ষুধা আর চোখে লজ্জা" তার নাম মধ্যবিত্ত
রমজান আলী,সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: সমাজের উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মাঝামাঝি স্তরে যাদের অবস্থান তাদের মধ্যবিত্ত বলা হয়। তবে মধ্যবিত্তের সু-নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। বাংলা অভিধানে মধ্যবিত্ত শব্দ বলতে বোঝায় ধনী-দরিদ্রের মধ্যবর্তী অবস্থাপন্ন মানুষ। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে গ্রাম অঞ্চলের মধ্যবিত্ত মানুষ গুলো এখন অনেকটায় বিপাকে।
সরেজমিন সাতকানিয়া উপজেলার কয়েকজন মধ্যবিত্ত মানুষের সাথে কথা বললে তারা বলেন, মধ্যবিত্তের জীবনটা কত যে কষ্টের তা ভুক্তভোগী ব্যতীত অন্য কেউ অনুধাবন করতে পারে না। মধ্যবিত্তের অবস্থা হচ্ছে ঘরপোড়া গরুর মতো, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। অর্থাৎ পণ্যের দাম বাড়লেই ভয় তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। আমরা করোনা কালিন সময়ে দেখেছি, নিম্ন বিত্তরা রাষ্ট্র এবং সমাজের ধনী ব্যক্তিদের দ্বারা নানা ভাবে সহায়তা পেয়েছে। এ দিক থেকে আমরা মধ্যবিত্তরা বর্তমানে উর্ধমুখী দ্রব্যমূল্যের বাজারে পেটে ক্ষুধা আর চোখে লজ্জা নিয়ে জীবন যাপন করছি।
ছদাহা ইউনিয়নের মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ বলেন, আমাদের অঞ্চলে যাদের দুই থেকে পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে এই প্রকৃতির মানুষকে সবাই মধ্যবিত্ত পরিবার বলে। এদের অনেকেই ব্যবসা বানিজ্য আবার অনেকেই কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। বিগত দুই বছর এরা না পারছে ব্যবসা করতে। না পেয়েছে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকারি ফসল ধান,বেগুন ও অন্যান্য ফসলের ন্যায্য দাম। ফলে এই শ্রেনীর মানুষ গুলো বেশ বিপদের মধ্যে দিন পার করছে।
অপর দিকে নিম্নবিত্তরা মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ বিত্তদের জমিতে কাজে গেলে মাত্র ছয় ঘন্টায় মজুরী পাচ্ছে (কাজের ধরণ বুঝে) সাতশত থেকে একহাজার টাকা পর্যন্ত। আবার অনেকেই সরকারি ভাবে নানা রকম ভাতা পাচ্ছে। এর বাইরেও রয়েছে, পনেরো টাকা কেজি দরে নির্দিষ্ট কার্ড ধারিদের চাল ক্রয়-সহ স্বল্প মূল্যে ও.এম.এস এবং টি.সি.বি পন্য ক্রয়ের সুযোগ-সুবিধা।
তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের যে কী সমস্যা তা বলে বোঝানো যায় না। তারা না ট্রাকের চাল নেওয়ার লাইনে দাঁড়াতে পারে, না ঋণ করে খেয়ে শোধ করতে পারে। আবার সরকারি সুযোগ ভোগ করতেও মধ্যবিত্তের সম্মানে বাধে। এককথায় পেটে খিদে মুখে শরম।
বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, স্কুল-কলেজের শ্রেণি কক্ষের সঙ্গে তুলনা করা চলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের বর্তমান অবস্থাকে। তাঁর মতে, ক্লাসের প্রথম সারির শিক্ষার্থীর কথা সবাই মনে রাখে। আবার একইভাবে একদম পেছনের সারিতে যারা বসে, তাদের কথাও মনে রাখা হয়। মানুষ কেবল ভুলে যায় তাদের কথা, যারা মাঝের সারির শিক্ষার্থী। সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও ঠিক তেমনি ভাবে সবার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। অথচ এই মাঝের সারির মানুষগুলোর মধ্য থেকেই বেরিয়ে এসেছে অসাধারণ সব প্রতিভা।
তিনি বলেন, যুগে যুগে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষগুলোই সমাজ পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। সব সংগ্রামে সবার আগে এগিয়ে এসেছে। তাই আমাদের সবার উচিত, যারা মুখ ফুটে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারে না, সেই মানুষ গুলোর পাশে থেকে তাদের সাহায্য করা।
সবজির বাজারে আগুন, ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। অন্যান্য সবজি দামে পিছিয়ে নেই, বরং এগিয়ে। কিন্তু সেই সবজির দামের লভ্যাংশ কি চাষি পাচ্ছে?
সবজি দিয়ে নিত্য আহার করাও বর্তমানে কঠিন। কিন্তু কৃষির দেশ বাংলাদেশে এমনটা কেন হবে? এ লজ্জা রাখি কোথায়?