মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: কৃষিতে এক নতুন দিগন্ত এনেছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান। প্রথমে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে করা হয়েছে। আবার বাড়তি ফসল বিক্রি করে আয়ও হচ্ছে।
হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত ও পরিবারের নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা পূরণে গড়ে তোলা হয়েছে এ বাগান।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পে’র আওতায় জেলার বাহুবল উপজেলায় দুটি ধাপে তৈরি করা হয়েছে ১৪০টি বাগান। আরও শতাধিক বাগান তৈরি কার্যক্রম চলছে।
এর মধ্যে উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকে রয়েছে ২০টি বাগান। এসব তথ্য নিশ্চিত করে এ ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. শামিমুল হক শামীম জানান, তগলী গ্রামের কৃষাণী জোসনা আক্তার, নাজমা আক্তার, জোসনা আক্তার, লামাতাশী গ্রামের আয়েশা খাতুন, ভৈরবীকোনা গ্রামের কৃষক আরফান আলী, ভুলকোর্ট গ্রামের আজমান মিয়া, দ্বিমুড়া গ্রামের আরজু মিয়া, লুৎফুর রহমান, হাফিজপুর গ্রামের এনামুল হক, নুরুল হক, লামাতাশী গ্রামের জসিম উদ্দিন ও মো. ছায়েদ মিয়াসহ অন্য কৃষকরা নিজ নিজ পতিত জমি আবাদ করে বাগান তৈরী করে সবজি ও ফল চাষ করছেন। তারা সবাই লাভবান।
তাদের ন্যায় আমার থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে অন্যান্য কৃষক-কৃষাণীরা পতিত জমি আবাদ করে বাগান তৈরী করে চাষ করছেন। তারাও লাভবান হচ্ছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, ইতোমধ্যে এসব বাগান থেকে শাকসবজি আহরণ শুরু করেছেন কৃষক-কৃষাণীরা। উৎপাদিত সবজি দিয়ে তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে আয়ও করছেন।
উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. শামিমুল হক শামীম জানান, বাছাইকৃত তালিকাভুক্ত পরিবার থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে প্রথমে দু’দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় দেড় শতক জমিতে নান্দনিক বেড়া দিয়ে পুষ্টি বাগানের প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়। বাগানের মডেল এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন একজন কৃষক সারাবছরই এখান থেকে কিছু না কিছু ফসল পান। কখনো সবজি থাকবে, আবার কখনো থাকবে ফল। বীজ, সার, চারাসহ যাবতীয় ব্যয় সরকারের তরফ থেকে বহন করা হচ্ছে। কৃষাণ-কৃষাণী শুধু পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরও জানান, প্রতিটি বাগানে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর পাঁচটি বেড। এছাড়া দুই পাশে মাচা রয়েছে। বেডে লাগানো হচ্ছে শাক-সবজি ও মাচায় লাউ-কুমড়া-সিম-বরবটি-ঝিঙা। তাছাড়া দুই মাথায় নিটি করে ছয়টি ফল ও মসলার চারা রোপণ করা হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও ফলের চারা বাগানের বাইরে অন্যত্র লাগানো হয়েছে। শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে লাল শাক, গীমা কলমি, পুঁইশাক, ডাটা শাক, ধনিয়া, কাঁচা মরিচ, মুলা।
তগলীর সুবিধাভোগী নাজমা আক্তার জানান, সন্তোষজনক উৎপাদন হয়েছে। প্রতিমাসে তিনি তার পরিবারের ১৫ থেকে ২০ দিনের সবজির চাহিদা এখান থেকে মেটাতে পারছেন। এছাড়া মাঝেমধ্যে কিছু বিক্রি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস কিনছেন।
লামাতাশী গ্রামের আয়েশা খাতুন বলেন, আমার বাড়ির আঙিনায় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শামীম স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী সবজি চাষ করেছি। বেশ কিছুদিন ধরে বাজার থেকে আমাকে শাকসবজি কিনতে হয় না।
ভৈরবীকোনা গ্রামের কৃষক আরফান আলী বলেন, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শামিমুল হক শামীম স্যারের সহযোগিতায় কিছুদিন আগে বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করেছি। নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কিছু সবজি বিক্রি করতে পারছি। শুধু তাই নয়, তিনি সরেজমিনে এসে রোগ ও পোকা থেকে রক্ষা করতে পরামর্শ দিয়ে সার্বিক সহায়তা করছেন।
বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সে অনুযায়ী আমরা পারিবারিক সবজি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বসতবাড়ির আঙিনায় অনাবাদি ও পতিত জমিতে প্রকল্পের সহযোগিতায় উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সবজি, মসলা ও ফল উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পতিত জমির সদব্যবহারের মাধ্যমে চার সদস্যের একটি পরিবারের সবজির চাহিদা নিশ্চিত করতে পারে এমন ব্যবস্থা এখানে রাখা হয়েছে। পরিবারের নারীরা কাজের ফাঁকে যাতে পরিচর্যা করতে পারেন, সেজন্য তাদেরও আনা হয়েছে প্রশিক্ষণের আওতায়।