রেলের অস্থায়ী ড্রাইবারের বেতন নিয়ে নয়-ছয়, আরএনবি কমান্ডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মাজহারুল ইসলাম রানা, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: রেলের পূর্বাঞ্চলের আরএনবি কমান্ডেন্ট রেজওয়ানুর রহমান অস্থায়ী ড্রাইভারের টাকা আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ তুলেছে ওয়াকার নামের এক ড্রাইভার। ওয়াকার চাকরিতে যোগদানের ২ মাস নিজ একাউন্টে বেতন পেলেও হঠাৎ একাউন্টে বেতন যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ২ মাস বেতন বিহীন চাকরি করার পর বেতন আসলেও সেই বেতন চলে যায় আরএনবি কমান্ডেন্ট এর কাছে। এরপর শুরু হয় বেতন দেওয়া নিয়ে নয় ছয় প্রক্রিয়া।
ভুক্তভোগী ওয়াকার জানান,"আমি ২০২২ সালের ১৭ই মে থেকে বাংলাশে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সদর দপ্তরে কর্মরত আরএনবি'র কমান্ড্যান্ট অফিসে ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করি। আমার দৈনিক বেতন ৫৭৫/- টাকা হারে ধরা হয়েছিল যা মাস হিসাব করলে ১৭ হাজার ২ শত ৫০ টাকাতে গিয়ে দাড়ায়। চাকরিতে যোগদান করার পরে মে মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত আমার বেতন সঠিকভাবে আমার ব্যাংক একাউন্টে আসে। কিন্তু তার পরবর্তিতে আমি আরো ২ মাস ১৮ দিন চাকরি করে বেতন না পাওয়ার কারণে আমাকে চলতে নানাবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, তাই আমি চাকরি ছেড়ে চলে এসেছিলাম।
এর চার মাস পরে বাজেট হয়ে আমার বেতন আসে চলতি বছরের ২২শে জানুয়ারী তারিখে। আমাকে অফিস থেকে ফোন করে আমার বকেয়া বেতন নেওয়ার জন্য আসতে বলা হলে, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে আমাদের বেতন তো ব্যাংক একাউন্টে আসার কথা। তার উত্তরে তিনি বলেন টাকাতো কমান্ড্যান্ট স্যার ক্যাশ করে নিয়েছে, আপনাকে অফিসে এসে ক্যাশ টাকা নিতে হবে তারপর আমি অফিসে টাকা নেওয়ার জন্য আসলে তারা একটি সেলারি শীটে আমার স্বাক্ষর নেন। স্বাক্ষর নিয়ে টাকা কমান্ড্যান্ট স্যার দিবেন বলে স্যারের কাছে যেতে বলেন। তারপর আমি স্যারের কাছে গেলে স্যার আমকে বলে কিসের টাকা পাওনা। তারপর আমি স্যারকে বললাম আমার ২ মাস ১৮ দিনের টাকা পাওনা রয়েছে। তার পর প্রথমে তিনি আমাকে ৫ হাজার টাকা দিতে চান,আমি টাকা না নেওয়ায় তিনি আমাকে আরো ৫ হাজার টাকা দেন। কিন্তু আমার পাওনা অনুযায়ী আমি ৪৪ হাজার ৮ শত ৫০ টাকা পাবো। এ কথা আমি স্যারকে বললে স্যার আমাকে বলে আর কিসের টাকা...? তুমি আর কোনো টাকা পাবেনা। পরে আমি টাকা না নিয়েই চলে আসি। তার দুই দিন পরে কমান্ড্যান্ট স্যার অফিস কর্মচারী সামিমের মাধ্যমে আমাকে ১৮ হাজার টাকা অফার করেন। কিন্তু আমি এই টাকা ও গ্রহন করিনি।
ওয়াকার হোসেন এর পুরো বেতন ও টাকা কেটে নেয়ার কথা আরএনবির একাধিক সদ্যস্য নিশ্চিত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আরএনবি সদস্য জানান, "কমান্ডেন্ট স্যারকে অনেক বার বলেছি গরীবের টাকা না রাখার জন্য।উনি কেনো এমন করছে বুঝতে পারছি না।"
এবিষয়ে কমান্ডেন্ট রেজোয়ানুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন,"টাকা শামীম নামের তার স্টাফের কাছে রাখা আছে। তিনি প্রথমে দাবী করেন ওয়াকার পুরো বেতন নিয়ে গেছে, কথার এক পর্যায়ে বলেন আমি টাকা আমার স্টাফ শামীমের কাছে দিয়েছি। তার সাথে যোগাযোগ করুন।"
শামীমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,"স্যার আমাকে ১৮ হাজার টাকা দিতে বলেছে। পুরো টাকা দিচ্ছেনা কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন স্যার জানে উনি কেনো টাকা দিচ্ছে না।টাকা একাউন্টে না গিয়ে উনার হাতে কিভাবে গেলো জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।"
কামান্ডেন্ট এর ড্রাইভারের টাকা নয়ছয় প্রসংগে তথ্য সংগ্রহে গেলে কমান্ডেন্ট এর নুর আলম নামের আরেক ড্রাইভার বলেন, আমারো ১৯দিনের বেতন তারা দিচ্ছে না। মাঝখানে আমি ৩ মাস ডিউটি করিনি অথচ আমার ডিউটি না করা সময়টুকু হাজিরা ক্ষাতায় উপস্থিতি উঠিয়ে আমার সাক্ষর নিয়ে তিন মাসের বেতন তুলেছেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আমি ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের কাছে অভিযোগকারীদের পাঠিয়েছি।