প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাবলম্বী হয়ে উঠা ও সফল উদ্যোক্তা শান্তার গল্প

অপু ইব্রাহিম, চট্টগ্রাম নগর প্রতিনিধি: নারীকে স্বাবলম্বী বা আত্মনির্ভরশীল হতে অনেক কঠিন সংগ্রাম ও সাধনা করতে হয়। পারিবারিক ও সামাজিক বাধাও অতিক্রম করতে হয়। স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ইচ্ছে শক্তি ও দৃঢ় মনোবল।
নিজের প্রবল ইচ্ছে শক্তিতে বলিয়ান হয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা সন্দ্বীপের শান্তা।
সাগরকন্যা খ্যাত সন্দ্বীপ, যেখানে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে কিছু দিন হলো। কিন্তু মনের ভেতর ধর্মীয় গোঁড়ামি আর কুসংস্কার সেখানে নিত্যদিনের খেলা। সেখানকার নারীরা শুধু মাত্র ঘর সংসারে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে বিশ্বাস করেন এখনও অনেকেই।
সারা দেশে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সেখানে নারীরা স্বাবলম্বী হওয়া, ঘর থেকে বের হওয়া এখনও বড় ধরনের বাঁধা। চির দিনের অচলায়তন ভেঙ্গে দৃঢ় প্রত্যয়ে শান্তা নামের গৃহবধূ হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছেন অনলাইন ব্যবসা, যাতায়াতে ব্যবহার করছেন স্কুটি।
সন্দ্বীপের মুছাপুর গ্রামে বেড়ে উঠা শান্তা (পুরো নাম মানসুরা আকতার শান্তা) মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে বসতে হয় বিয়ের পিড়িতে। বিয়ের পর উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশুনা চালিয়ে যান। সেই সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি বাচ্চা কনসিভ করেন৷ ৩ মাসের শিশু কন্যাকে নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন।
পরবর্তীতে সন্দ্বীপের মুস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগ অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা চালিয়ে আসছেন।
স্বামী,সন্তান, সংসার ও পড়াশুনা সব সামলাতে হয় শান্তাকে। এসব কিছু সামলানোর পাশাপাশি নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার কর্মস্পৃহা কাজ করছিল তাঁর মধ্যে। ২০১৭ সালে তাঁরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূর্ব সন্দ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়ে বৈশাখী উৎসবে শখের বসে পিঠার স্টল নিয়ে ভালো সাড়া পান।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালে একই প্রতিষ্ঠানে সূবর্ণ জয়ন্তীতে আচার বিক্রি করে সুনাম অর্জন করেন। বিক্রির কিছু আচার থেকে গেলে তা ফেইসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করেন।
সেই থেকে মাথায় আসে অনলাইন বিজনেস করার। স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২১ সাল প্রথম পথ চলা শুরু হয়। টিং টন আচার নামক একটি অনলাইন পেজ খুলে অনলাইন বিজনেস প্রথম যাত্রা শুরু করেন।
এছাড়া সন্দ্বীপ ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপের সাহায্যে অনলাইনে অর্ডার আসতে শুরু হয়। সম্পূর্ণ নিজের হাতে তৈরি করে বিভিন্ন রকমের আচার, ঝালের নাড়ু, নারকেলের নাড়ু, সন্দেশ বিভিন্ন রকমের পিঠা, রসমালাই বিক্রি করে থাকেন। প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয় বলে শান্তা জানান।
দৃপ্ত পায়ে ছুটে চলা শান্তাকে এতো কিছুর পরও শিক্ষার অন্বেষণে প্রতিদিন কলেজ যেতে হয়। তিনি যাতায়াতের অসুবিধার কারণে ব্যবসার টাকায় স্কুটি ক্রয় করেন । অপ্রতিরোধ্য নারী শান্তা এখন স্কুটি চালিয়ে কলেজে যান।
এ বিষয়ে অদম্য সাহসী উদ্যোক্তা নারী মানসুরা আকতার শান্তা "দি বাংলাদেশ টুডে" কে বলেন, আমি আমার চলার পথে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পেয়েছি আমার স্বামী থেকে। আমার শ্বাশুরিও অনেক ভালোভাবে আমাকে সহযোগীতা করেছেন।
সবসময় চেষ্টা করেছি স্বাবলম্বী হতে। আমি আমার এ সামান্য স্বল্প আয়ের শুরু করা অনলাইন বিজনেসে এত সাড়া পাবো তা কখনো ভাবতেও পারেনি। পাশাপাশি নারীরা এখন বিশ্ব জয় করছে সেখানে স্কুটি চালানো সামন্য বিষয়। অনেক আগ থেকে আমার ইচ্ছে ছিল স্কুটি চালানো, আমার বান্ধবী তাহমিনাকে দেখে উৎসাহ পেয়েছি।
শান্তার স্বামী ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াজেদ ডালিম বলেন,নারী পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। পুরুষরা একটু সহযোগীতা করলে নারী অনেক এগিয়ে যেতে পারে৷ আমার স্ত্রী শান্তার মাঝে এগিয়ে যাওয়ার স্পৃহা আছে। আমি শুধু তাকে উৎসাহ দিয়েছি।
তাঁর হোম মেইড আচার, বিভিন্ন ধরনের পিঠার ব্যবসা করে যাচ্ছে অনলাইনে। সে নিজ উপার্জিত অর্থে স্কুটি কিনেছে। স্কুটি চালানোর ফলে আমি আমার ব্যবসায় বেশি সময় দিতে পারছি। নিজে স্কুটি চালিয়ে কলেজ যায়, মেয়েকেও স্কুলে দিয়ে আসে। এখন আর আমাকে যাওয়া লাগে না।
চট্টগ্রাম উত্তরজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বিশিষ্ট নারী নেত্রী রোমানা নাসরীন "দি বাংলাদেশ টুডে" কে বলেন,নারী পুরুষ ঐক্য গড়ি,স্মার্ট বাংলাদেশ দুজনে গড়ি।এভাবে নারী পুরুষ একজন অন্যজনের পরিপূরক হতে হবে। তবেই সংসারে শান্তি সম্মান সমতা থাকবে।