রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের ধান চাল ভাঙ্গার একমাত্র অবলম্বন ঢেঁকি। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। সময়ের বিবর্তনে বিলিন হতে চলেছে ঢেঁকি। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে দেখা মিলতো ঢেঁকি। এখন ঢেঁকির কদর কমে যাওয়ায় তেমন আর দেখা মেলেনা।
বিভিন্ন গ্রামের বর্তমানে কয়েকটা বাড়ি ঘুরলে দেখা মিলে একটা টেঁকির। সেগুলা রয়েছে আবার অযত্নে। ফজরের আজানের পাশাপাশি স্তব্ধতা ভেঙ্গে ঢেঁকির শব্দ ছড়িয়ে পড়ত উপজেলার গ্রামগুলোর বিভিন্ন বাড়িতে। এখন সেই শব্দ আর শোনা যায় না। অথচ একদিন ঢেঁকি ছাড়া গ্রাম কল্পনা করাও কঠিনতর ছিল। যেখানে বসতি সেখানেই ঢেঁকি। কিন্তু আজ তা আমাদের আবহমান গ্রামীণ সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
এক সময় রায়গঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে প্রতিটি পরিবারেই ধান-চাল গুড়ো করার ঢেঁকির প্রচলন ছিল। ছিল ঢেঁকি থেকে উৎপাদিত চালের ব্যাপক প্রচলন। তখনকার সময়ে পরিবারের নারীরা ধান, গম, চালসহ বিভিন্ন খাদ্য শস্য ভাঙ্গার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন। বিশেষ করে শবে-ই-বরাত, শবে-ই-কদর, ঈদ, পূজা, নবান্ন উৎসব পৌষ পার্বনসহ বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে পিঠা-পুলি খাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাড়িতে ঢেঁকির নতুন ধানের চালের গুড়ো তৈরীতে ধুম পড়ে যেত। সে সময় গ্রামের বধুদের ধান ভাঙ্গার গান আর ঢেঁকির ছন্দময় শব্দে চারিদিকে চলতো হৈ চৈ আর আনন্দ ফুর্তি।
অনেক দরিদ্র পরিবার ঢেঁকিতে চাল ভাঙ্গিয়ে হাটে বাজারে বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করতো। আর ঢেঁকিতে ভাঙ্গা চাল খুব সুস্বাদু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় ওই চালের খুব চাহিদা ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া এবং সময়ের বিবর্তনে ধান, গম, চাল ভাঙ্গার মেশিনের কারনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে।
উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের ডুমরাই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা গোলাম ইয়াজদানী তালুকদার বলেন, এই অঞ্চলে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার ব্যাপক প্রচলন ছিল। ঢেঁকিতে ভাঙ্গা চালের ভাত অনেক পুষ্টি ও সুস্বাধু। এখন মেশিনে ভাঙ্গা চালে ও ভাতে তেমন স্বাদ নেই।