দু-এক মাসের মধ্যেই এলসি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে: গভর্নর

বর্তমানে ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিয়ে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা আগামী দু-এক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নবনির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এমন কথা বলেন তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতি মো. সামীর সাত্তারের নেতৃত্বে সাক্ষাৎকালে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর, সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিষদের অন্যান্য সদস্য।
এ সময় রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তিতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান ডিসিসিআইর নেতারা।
সামীর সাত্তার বলেন, ‘আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা প্রয়োজন। ঋণপত্র নিষ্পত্তিতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
এ সময় আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানিতে এলসি মার্জিন ন্যূনতম করাসহ বেশ কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর পবিত্র রমজান সামনে রেখে আটটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
সার্কুলারে বলা হয়, ‘আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুরের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে ওই পণ্যগুলোর আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।’
কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এসব পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে গিয়ে ব্যাংক থেকে বার বার ফিরে আসছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এলসি খোলায় যাতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়, এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ডলার সহায়তার কথা বলেন তারা।
গভর্নর বলেন, অর্থনীতিতে এখন তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধি ও চীনের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও এই তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি বেশ স্থিতিশীল। আগামী দু-এক মাসের মধ্যে ঋণপত্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত পরিবর্তন তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রবাসী আয় পাঠাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাদানের বিধান শিথিল করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যাংক কর্তৃক মাশুল মওকুফ ও রেমিট্যান্স আহরণে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে (এমএফএস) সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ আরও বাড়বে।
বৈঠকে সময়োপযোগী মুদ্রানীতি ঘোষণা করায় বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মো. সামীর সাত্তার। বলেন, এবারের মুদ্রানীতিতে উল্লিখিত সহায়ক নীতি ও নির্দেশিকা দেশের বেসরকারি খাতের পাশাপাশি আর্থিক খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে।
তিনি কৃষি, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) এবং আমদানি বিকল্প শিল্পের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্প অব্যাহত রাখার উদ্যোগকেও স্বাগত জানান। সেই সঙ্গে দেশের সিএমএসএমই খাতের স্বার্থে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তিতে এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদানের প্রক্রিয়া সহজীকরণসহ প্রয়োজনীয় সংষ্কারের আহ্বান জানান। এ ছাড়া, সহজে ঋণ পেতে তিনি তরুণ এবং উদ্ভাবনী স্টার্টআপগুলোর জন্য ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া সহজ করারও আহ্বান জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সুশাসন নিশ্চিত এবং অভ্যাসগত খেলাপিদের কাছ থেকে দ্রুত ঋণ পুনরুদ্ধারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সেজন্য ব্যাংকিং আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনারও পরামর্শ দেন তিনি।