খালিদ হোসেন মিলু, বদলগাছী(নওগাঁ)প্রতিনিধি: চাকরির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবিরের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের গয়ড়া সরদারপাড়া গ্রামে। ঢাকার মিরপুরে চাকরির কোচিং সেন্টার রয়েছে তাঁর।
আলমগীর কবির বগুড়ায় একটা কোচিং সেন্টার খুলেছিল এরপর তার নিজ এলাকা বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউপির কোলাবাজারেও চাকরির কোচিং সেন্টার খুলেছিলেন, সেখানে কয়েক মাস কোচিং সেন্টার চালানোর পর আবার বড়সর পরিসরে ঢাকা মিরপুরে গড়ে তোলেন চাকরির কোচিং সেন্টার।
তার কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে এলাকার অন্তত ৯০ জন তরুণ–যুবক বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি পেয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
রেলওয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত রবি ও সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পিএসসির সাবেক ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছয়জন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির। প্রশ্নপত্র ফাঁস কান্ডে আবেদ আলী ফেঁসে যাওয়ার পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলমগীরের বাবা আবুল কাশেম আগে দিন'মজুরের কাজ করতেন। নওগাঁর বদলগাছীর উপজেলার কোলা বিজলি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কোলা আদর্শ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন তিনি। পরে কুষ্টিয়ার একটি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। এক যুগ আগে পিএসসিতে অফিস সহায়ক পদে চাকরি শুরু করেন আলমগীর। পরে পদোন্নতি পেয়ে তিনি পিএসসির সহকারী পরিচালক হন।
কোলাহাট বাজারসংলগ্ন গয়ড়া সরদারপাড়া গ্রামে পুরনো একটা ইটের পাকা বাড়িতে আলমগীরের বৃদ্ধ মা ও বাবা থাকেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোট ভাই এস এম হুমায়ুন কবির শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করেন এবং ছোট বোন মিনা আক্তার রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাঁটলিপি মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর।
রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের সরকারি বাসভবনে পরিবার নিয়ে থাকেন আলমগীর কবির। মিরপুরে ‘জব কর্নার সাঁটলিপি অ্যান্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ নামে একটি চাকরির প্রস্তুতি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন তিনি। দেড় বছর ধরে কোচিং সেন্টার ব্যবসা নিয়ে আলমগীরকে এলাকায় বেশ সরব দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বদলগাছীর কোলাহাট বাজারে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে মিরপুরে পরিচালিত জব কর্নার সাঁটলিপি অ্যান্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নামে কোচিং সেন্টারের একটি শাখা খোলেন। অবশ্য আট থেকে নয় মাস চলার পর কোলাহাটের সেই কোচিং সেন্টারটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যা
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চাকরির লাইনঘাটের জন্য এলাকায় আলমগীরের খুব নামডাক আছিল। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকার অনেক বেকার ছেলেপেলে সরকারি অফিসে চাকরি পাইছে। নিজের এক ভাই সিক্স-সেভেন পাস, তাক (তাকে) মন্ত্রণালয়ে ড্রাইভারের চাকরি পাইয়ে দিছে। আর এক বোন জজকোর্টে চাকরি পাইছে। আলমগীরের সঙ্গে লাইনঘাট করে শুধু কোলা ইউনিয়নে গত ৪ থেকে ৫ বছরে ৮০ থেকে ৯০ জন চাকরি পাইছে। এখন বুঝতে পারিচ্ছি, সেই লাইনঘাট কীভাবে করত।’
স্থানীয় দোকানি বেলাল হোসেন বলেন, ‘কোলাহাট বাজার প্রত্যন্ত এলাকার একটি বাজার। এই বাজারে বছর দেড়েক আগে চাকরির প্রস্তুতির কোচিং সেন্টার গড়ে ওঠে। সেই কোচিং সেন্টারে পড়লে নাকি সরকারি অফিসে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি পাওয়া সহজ হবে। এলাকার অনেক বেকার তরুণ চাকরিও পাইছে। তাদের কেউ সচিবালয়ে কম্পিউটার অপারেটর, কেউ সাঁটলিপিকার, আবার অনেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে চাকরি পাইছে। এই গ্রেপ্তারকাণ্ডের পর এখন কিছুটা অনুমান করা যাচ্ছে, কী ভাবে এদের চাকরি হইছে।’
গত মঙ্গলবার বিকেলে আলমগীর কবিরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর বাবা আবুল কাশেমের (৭৫) সঙ্গে। ছেলের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বলেন, ‘শুনতেছি, ছেলেকে নাকি পুলিশ গ্রেপ্তার করিছে। কী কারণে গ্রেপ্তার হছে, তার কিছু জানি না। ছেলে, মেয়ে, জামাই কেউ কিছু বলোছে না। ছোট ছেলে ও মেয়েজামাই থানা-পুলিশের কাছে দৌড়াদৌড়ি করোছে।’
আলমগীরের প্রতিবেশী এস এম আবদুর রউফ বলেন, ‘আলমগীর আমাদের গ্রামেই অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জন ছেলেমেয়েকে চাকরির পথ দেখিয়ে দিয়েছেন।
আলমগীরের আরেক প্রতিবেশী খোকা মিয়া বলেন, ‘আলমগীর এলাকায় তেমন সম্পদ করেনি। গ্রামে তার বাবার পুরানো একটা ইটের বাড়ি আছে। আর আলমগীর বিঘা তিনেক জমি কিনেছেন। এখন ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি কিংবা জমিজমা কিনিছে কি না, বলতে পারব না।’ বছরে ঈদের সময় গ্রামর বাড়িতে আসে -মা বাবার খাওয়া খরচের টাকা তিনি দিতেন। এলাকায় তার বেশ সুনাম রয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন সেবামূলক সামাজিক সংগঠনে সে নানা সময়ে আর্থিক সহায়তা করতেন।
ইউপি সদস্য সুহেল রানা বলেন, শুনেছি পিএসসির সহকারী পরিচালক এসএম আলমগীর কবির এলাকায় বেশ কিছু বেকার যুবকদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।তার প্রচেষ্টায় যারা চাকরি পেয়েছেন তারা পরিবার পরিজন নিয়ে সচ্ছল ভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নিজ এলাকায় আলমগীর কবিরের বেশ সুনামও রয়েছে।
পিএসসির সহকারী পরিচালক এসএম আলমগীর কবিরের মাধ্যমে যারা চাকরিতে ঢুকছেন তাদের অনেকের অস্বস্তি আর বিরম্বনায় কাটছে সময়।