মো.এমরান হোসেন, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: লাখো ভক্তের আল্লাহ আল্লাহ জিকিরের ধ্বনি ইয়া রাসুল আল্লাহ, ইয়া রাসুল আল্লাহ দরুদে মিলাদ ও আখেরী মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদ এ মিলাদুন্নবী (স.) আধ্যাত্মিক সাধক হযরত গাউছুল আজম শাহসুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী প্রকাশ বাবা ভান্ডারী (ক.) এর পুন:নির্মিত রওজায় ও মাইজভান্ডার শাহী ময়দানে উদযাপিত হয়েছে।
বিকেল ৩টায় কোরআন সুন্নাহর মাহফিল, মিলাত ও জিকির শেষে দেশ ও বিশ্বের সকল উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন গাউছিয়া রহমান মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ মুজিবুল বশর আল-হাছানী আল-মাইজভান্ডারী (ম.)।
এ সময় তিনি বলেন, মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে সকলের জীবন ঘটতে হবে। মাইজভান্ডারী দর্শন হচ্ছে ঐশী প্রেমবাদ ও মানবতাবাদী দর্শন। এ দর্শনে রয়েছে সবার উপরে মানুষ। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে যাওয়াই মাইজভান্ডারী মহাত্মাদের জীবন সাধনার মূল লক্ষ্য। এসময় লাখো ভক্তবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সোমবার ভোরে পুন:নির্মিত আধ্যাত্মিক সাধক শাহসুফী মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী (ক.) প্রকাশ বাবা ভান্ডারীর রওজা শরীফ খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে জিয়ারত করার জন্য দরবারে আশেক -ভক্তের ঢল নামে। সেখানে আশেক ভক্তরা কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আজগর, দরুদ মিলাদে মশগুল থাকতে দেখা যায়। ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল থেকে সৈয়দ গোলামুর রহমান (বাবা ভান্ডারী) রওজা শরীফের পুন:নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। কাজ শেষ হওয়ায় সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) থেকে রওজা শরীফ খুলে দেয় গাউছিয়া রহমান মঞ্জিল পক্ষ।
জানা গেছে, হযরত গাউছুল আযম শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারী ১৮৬৫ সালের ১৪ অক্টোবর মাইজভান্ডারে পিতা সৈয়দ আব্দুল করিম শাহ ও মাতা সৈয়দা মোশারফ জান এর ঘরে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা হলেন গাউছুল আযম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারির ছোট ভাই।
আজ থেকে শত বছর আগে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ফটিকছড়ি ইউনিয়নের দূর্গম পাহাড়ি গহিন অরন্যের ফরিদ খালী খালের পাশে পাহাড়ের গুহায় কঠিন রেয়াজতে মগ্ন ছিলেন বাবা ভান্ডারী। তিনি ওখানে দীর্ঘদিন মানবশুন্য পর্বত শিখায় সাধনা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। লোকমুখে প্রচলিত আছে সেখানে হযরত গোলামুর রহমান বাবা ভান্ডারী দীর্ঘ ১২বছর কঠিন রেয়াজত করেন। সেখানে তিনি রেয়াজত শেষ করে রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের অপর দূর্গম পাহাড়ী এলাকা বটপুকুরিয়া এসে আবোরো কঠিন রেয়াজত শুরু করেন। পরবর্তীতে মাইজভান্ডারী ত্বরিকার প্রর্বতক, হযরত গাউসুল আজম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর নির্দেশে বটপুকুরিয়া থেকে মাইজভান্ডার দারবার শরীফে নিয়ে আসা হয় এই আধ্যাত্মিক সাধককে।
এরপর থেকে তার চাচা গাউছুল সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর সুফি তরিকার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী ও মাইজভাণ্ডারী দরবারের দ্বিতীয় প্রধান হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারি (প্রকাশ -বাবা ভান্ডারী)। বাবা ভান্ডারী একাত্তুর বছর ছয় মাস বয়সে ১৩৪৩ বঙ্গাব্দের ২২শে চৈত্র মোতাবেক ১৯৩৭ খৃষ্টাব্দের ৫ই এপ্রিল, ১৩৪৬ হিজরীর ২২শে মহররম রোজ সোমবার মাইজভান্ডারে ভোর ৭টা ৫৫ মিনিটে ওফাত গ্রহন করেন। এর পরে তার সমাধির উপর গম্বুজ খচিত মাজার তৈরী করা হয়। উক্ত মাজারে প্রতি বৎসর তার জন্ম ও ওফাতের তারিখে নানা ধর্ম ও মতের লাখো মানুষের সমাগম হয়।