সোহানুর রহমান, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
আজ রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মূল ঘটনা অনুসন্ধানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন দীঘিনালা উপজেলার লারমা স্কয়ার বাজারে পৌছে সহিংসতার ঘটনায় পুড়ে যাওয়া বাজার পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ি বাঙালি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন।
এ সময় চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ্ নূরী সহ তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন৷
পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ নুরুল্লাহ্ নূরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে তদন্ত কাজ আজ থেকে শুরু করেছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ বাজার ব্যবসায়ী, প্রত্যক্ষদর্শী, সুশীল সমাজ, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও হতাহত পাহাড়ি-বাঙালিদের সাথে কথা বলবো।’
পরে উপজেলা পরিষদের সেমিনার কক্ষে আলোচনা সভায় অংশ নেন তদন্ত কমিটি। সেখানে সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী, হতাহত পরিবারের সদস্য, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
এ সময় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও আহ্বায়ক, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী সহ খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় কমিটির প্রধান সকলের উদ্দেশ্য বলেন, পাহাড়ে পাহাড়ি বাঙালি সবাই শান্তি চায়। এলাকার শান্তি, সম্প্রতি যাতে বজায় রাখতে এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সেজন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে।
সভা শেষে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছড়াও দীঘিনালা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও কয়েকজনের জবানবন্দি নেন তদন্ত কমিটি।
আগামী ১৪ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটির সহিংসতার ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তদন্ত কমিটির তথ্য জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার খাগড়াছড়ি সদরের নিউজিল্যান্ড পাড়ায় গণপিটুনিতে মো. মামুন নামে এক যুবক নিহত হয়। মামুনকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে দীঘিনালায় সাধারন শিক্ষার্থীর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলের একপর্যায়ে দীঘিনালার লারমা স্কয়ার বাজারে দুর্বৃত্তের গুলির ঘটনায় এলাকায় পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। আগুন দেয়া হয় লারমা স্কয়ার বাজারে। এতে পুড়ে যায় পাহাড়ি-বাঙালির ৮৪টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার নানা ধরণের গুজব ছড়িয়ে পড়লে সহিংসতায় রূপ নেয়। এ ঘটনার জেরে খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আহত হন কয়েকজন।