ছায়েদ আহমেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের দৌরাত্ম্য ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সেবা প্রত্যাশীরা। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীরা একাধিক চক্র গড়ে তোলে রোগীদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে হাতিয়া পৌরসভা ২নং ওয়ার্ড চরকৈলাশ এলাকার মোঃ রাশেদ নামের এক ব্যক্তি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে জনৈক ডাক্তারের দালাল দ্বারা হয়রানি ও নাজেহালের শিকার হন। পরে তিনি 'হাতিয়া উপজেলা হাসপাতালে দালালমুক্ত পরিবেশ চাই' মর্মে নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দেন। এসময় মোঃ রাশেদের সাথে অন্তত ৬০ জন ভুক্তভোগীও সাথে ছিলেন।
ভুক্তভোগী মোঃ রাশেদ জানান, সাড়ে ১১ টার দিকে আমি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গেলে ডাক্তার রুমের সামনে থাকা ব্যক্তিটি ভিজিটের নাম করে আমার থেকে ৫শ' টাকা চায়, পরে আবার ৩শ' টাকা দিতে বলে। অফিস টাইমে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ডাক্তারের লোকটি আমার সাথে মারামারি লাগে। সেই সাথে হাতিয়া পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের ইলিয়াছ নামের এক ব্যক্তি জানান, গতকাল হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এলে আমাকে কয়েকটা টেস্ট দেয়। পরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কয়েকজন লোক এসে একেকজন একেক দিকে আমাকে টানাহ্যাঁচড়া শুরু করে।
পৌরসভা ৫নং ওয়ার্ডের সোহরাব নামের এক কিশোর জানান, জনৈক নারী ডাক্তার অফিস চলাকালীন সময়েও ৫শ' টাকার কম ভিজিটে রোগী দেখেন না।
এছাড়া আনোয়ার, রবিন, দিদার, নুরুল ইসলাম এবং উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের সোহেল নামীয় ব্যক্তিরা জানান, যখন তারা নিজেরা কিংবা কোনো রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসেন তখনই ডাক্তারদের দালাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এজেন্ট দ্বারা হয়রানির শিকার হন। কখনো কখনো নাজেহাল কিংবা হেনস্তার শিকারও হন।
এসব অভিযোগকারী ও বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশ এবং দূরবর্তী এরিয়া মিলিয়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ১৪ থেকে ১৭ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিক। কতিপয় চিকিৎসক অকারণেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নির্দিষ্ট করে পাঠাচ্ছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। রোগীরা বাধ্য হয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশে গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চলছে চিকিৎসার নামে কমিশন ও রমরমা সেবা বাণিজ্য। হাসপাতালের চিকিৎসক ও দালালদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে জমজমাট হয়ে উঠেছে ক্লিনিক ও প্যাথলজি ব্যবসা। সরকারি হাসপাতালে রোগীদের প্রয়োজন ছাড়াই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বলে দেওয়া হচ্ছে, কোন প্রতিষ্ঠানে এসব পরীক্ষা করাতে হবে।
সবমিলিয়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে, অপরদিকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত চিকিৎসা সেবা থেকেও।
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা: মনিসা রানী সরকারের সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, হাসপাতালে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি, এ ব্যাপারে টিএইচ এর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।