নভেম্বর মাস জুড়ে চলা সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটতে চলেছে। অবশেষে বাংলাদেশের ফরেন পলিসির ভাইটাল দু'টি স্টেশন দিল্লি এবং মস্কোতে নতুন দূত পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। আর ওই সিদ্ধান্ত চূড়ান্তকরণের মধ্যদিয়ে সব গুজবের ডালপালা আপাতত ছেঁটে ফেলা সম্ভব হয়েছে বলেই মনে করছে সেগুনবাগিচা। শুধু ভারত আর রাশিয়া নয়, সঙ্গে ফিলিপাইন এবং ইরাক- একলটে ৪ দেশে নতুন দূত পাঠানোর ফাইল অনুমোদন করেছেন আপৎকালীন সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকার প্রধানের সই করা ফাইল বঙ্গভবন ঘুরে সেগুনবাগিচায় পৌঁছানোর পর কালবিলম্ব না করেই ৪ পেশাদার কূটনীতিকের এগ্রিমো চাওয়া হয়েছে। এবার হোস্ট কান্ট্রির জবাবের অপেক্ষা। আট থেকে সর্বোচ্চ ১২ সপ্তাহের মধ্যে এগ্রিমো আসবে। হোস্ট কান্ট্রির অনাপত্তি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি তথা রাষ্ট্র ক্ষমতায় নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না এলে নতুন বছরের প্রথম কোয়ার্টারেই দেশগুলোতে নিজ নিজ অ্যসাইনমেন্ট শুরু করবেন প্রস্তাবিত ৪ দূত।
তিন মাস আগেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে বিবেচনা করত ভারত। বাংলাদেশের সরকারি ভাষ্যও ছিল প্রায় অভিন্ন। কিন্তু ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থান কথিত সব বয়ান পাল্টে দিয়েছে। আন্দোলনের চরম মুহূর্তে প্রাণে বাঁচতে বাধ্য হয়ে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয় শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে হওয়ায় দুই দেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কটি ক্রমেই তিক্ততায় রূপ নিচ্ছে। বন্ধুত্ব ভুলে একে অন্যকে চাপে রাখার চেষ্টা, বিশেষত: ঠুনকো ঘটনায় পরস্পরের সন্দেহ, অবিশ্বাস আর দোষারোপ চরম অস্বস্তিকর এক আবহ তৈরি করেছে। এ অবস্থা কাটিয়ে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাই হবে বাংলাদেশের পরবর্তী হাইকমিশনারের বড় চ্যালেঞ্জ! অবশ্য এ নিয়ে হেডকোয়ার্টারের ইতিবাচক পদক্ষেপও বিবেচ্য হবে। ফরেন পলিসি বাস্তবায়নে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিত্বরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় রক্তাক্ত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দিল্লি বা মস্কোর মতো গুরুত্বপূর্ণ মিশনে দূত নিয়োগে দু'বার ভাবতে হয়েছে। নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন বৈঠকে এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। সব মিলে জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ১৫ ব্যাচের প্রথম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে নয়াদিল্লিতে এবং ১৭ ব্যাচের মেধাবী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীকে মস্কো পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। মিস্টার খান চৌধুরী বর্তমানে ইরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। তার আগে তিনি ইয়াঙ্গুনে ছিলেন।
এই দিনে ১৭ ব্যাচের আরেক মেধাবী কর্মকর্তা বর্তমানে রাশিয়ায় বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফয়সল আহমেদকে ইরাকে এবং একই ব্যাচের ফার্স্ট সারোয়ার মাহমুদকে ফিলিপাইনে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। মিস্টার মাহমুদ বর্তমানে স্পেনে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে রয়েছেন।
বাংলাদেশের পরবর্তী হাইকমিশনার নিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট এবং…
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের পরবর্তী হাইকমিশনারের এগ্রিমো পৌঁছার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে রিপোর্ট হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম টাইমস নাও- এর মঙ্গলবারের প্রতিবেদনেই দিল্লির পরবর্তী বাংলাদেশ দূতের নিয়োগের কথা প্রথম প্রকাশ পায়। রিয়াজ হামিদুল্লাহ বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আঞ্চলিক সংস্থা ও বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক বিষয়াবলি দেখভাল করছেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে পেশাদার এই কূটনীতিক নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তার আগে তিনি শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন। রিয়াজ হামিদুল্লাহ নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে কাজ করেছেন। তিনি কাঠমান্ডুস্থ সার্ক সচিবালয়ে বাংলাদেশ মনোনিত পরিচালক ছিলেন। ভারত তার জন্য নতুন নয়, তিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং দিল্লির বাংলাদেশ মিশনে সফলতার সার্ভ করেছেন। স্মরণ করা যায়, দিল্লিতে বর্তমানে বাংলাদেশ হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ১১তম ব্যাচের পেশাদার কূটনীতিক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান। আগামী ৩১ শে ডিসেম্বর তিনি তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের সফল সমাপ্তি অর্থাৎ অবসর-উত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন।