ঢাকা
২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৯:১৮
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪

ডিবি হারুনের শতকোটি টাকার সম্পদ রতন দেওয়ানের নামে

গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার চন্দ্র পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় আনুমানিক পাঁচ বিঘা জমির ওপর সাততলা বিশাল আধুনিক ভবন। এর মালিক রকিব উদ্দিন দেওয়ান রতন। এলাকায় তিনি পরিচিত রতন দেওয়ান নামে। ই৪৪/১ হোল্ডিংয়ের ওই ভবন ভাড়া নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে মদিনাপেল ফ্যাশন ক্রাফট লিমিটেড।

এই ভবনের দক্ষিণে কয়েক শ গজ দূরে রতন দেওয়ানের আরেকটি বিশাল ওয়্যারহাউস। এটিও একটি জুতা তৈরির কারখানার কাছে ভাড়া দেওয়া। পাশেই কয়েক একর জমির ওপর আটতলা বিশাল আরেকটি ভবন। এটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী জুতা তৈরির চায়না প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন স্কাই ফুটওয়্যারের কাছে।

পাশের আরেকটি ভবন ভাড়া দেওয়া হয়েছে আগমনী সু কম্পানির কাছে। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজানগরে রতন দেওয়ানের রয়েছে প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। বিশাল ওই রিসোর্টে রয়েছে সুইমিংপুল ও স্পা সুবিধা। এসব প্রতিষ্ঠানে রতন দেওয়ানের বিনিয়োগ প্রায় হাজার কোটি টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, কাগজে-কলমে রতন দেওয়ানের নামে হলেও বিনিয়োগের একটি বড় অংশের মালিক সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। শ্রীমঙ্গল থানার সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাজপত্রে মালিক কে জানেন না, শুনেছেন প্যারাগন রিসোর্ট ডিবির হারুন স্যারের।

জানা গেছে, ৭০ শতাংশের বেশি জমির ওপর প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। নির্মাণের সময় বেশ কিছু পরিমাণ খাসজমিও দখল করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালের শেষের দিকে উদ্বোধন করা হয়।

সাততলা আধুনিক রিসোর্টে রয়েছে বিশাল লবি, ডিলাক্স, ডিলাক্স টুইন, সুপার ডিলাক্স, এক্সিকিউটিভ স্যুইট রুম, গেম অ্যান্ড কিড জোন, স্পা অ্যান্ড ফিটনেস সেন্টার, সুইমিংপুল, বোর্ড মিটিং ও ব্যানকুইট হল এবং বিশাল রেস্টুরেন্ট।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরাও বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক ডিবির হারুন সাহেব।

প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) আবদুল মতিন সরকার জানান, প্রতিষ্ঠানটির মালিক কে তিনি তা জানেন না। রতন দেওয়ান প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ পরিবার নিয়ে প্রায়ই আসতেন। এক-দুই দিন থেকে চলে যেতেন। তিনি এলে আগে থেকেই অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আসতেন। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের দেড় থেকে দুই মাস আগেও পরিবার নিয়ে এসে এক রাত থাকেন। ম্যানেজিং ডিরেক্টরই পরিচালনা করেন প্রতিষ্ঠান।

রতন দেওয়ানের বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায়। পরিবার নিয়ে তিনি বাস করেন রাজধানীর উত্তরায়। কালিয়াকৈরে তাঁদের পরিবার বিত্তশালী হিসেবে পরিচিত। বাবা ছিলেন অনেক জমির মালিক। মৌচাক এলাকায় তাঁদের তেলের পাম্প ছিল। এলাকায় ব্যাপক কলকারখানা গড়ে উঠলে বেড়ে যায় জমির দাম। এপেক্স ফুটওয়্যারের কাছে কিছু জমি বিক্রি এবং ওই টাকায়, পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় পাঁচতলা ভবন, একটি ওয়্যারহাউস ও একটি টাওয়েল কারখানা করেন রতন দেওয়ান। হারুন অর রশীদ গাজীপুরের পুলিশ সুপার হয়ে এলে বন্ধুত্ব হয় রতন দেওয়ানের সঙ্গে। এরপর এলাকায় তাঁর দাপট ও প্রতিপত্তি বেড়ে যায়।

কালিয়াকৈরের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন জানায়, মদিনাপেল ফ্যাশন ক্রাফট লিমিটেড, গোল্ডেন স্কাই ফুটওয়্যার ও আগমনী সু স্থাপন করা হয়েছে পাঁচ-ছয় বছর আগে। ভবনগুলোর মালিক রতন দেওয়ান বলে তারা শুনেছে। কারখানা পরিচালনা কারা করেন জানা না থাকলেও বড় অনুষ্ঠান হলে ডিবির হারুনও আসতেন বলে শুনেছে। মদিনাপেল ফ্যাশন ক্রাফট লিমিটেডের সামনে ব্যবসা করেন আবদুল লতিফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আসল মালিক কে জানি না। তবে সবাই তো বলে এসব কারখানা রতন দেওয়ানের।’

হারুন পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর সম্পদ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা একাধিক সূত্র জানায়, রতন দেওয়ানের চায়না জুতার কারখানা ও গার্মেন্টসে বেনামে আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের শেয়ার রয়েছে। গত জুলাই মাসে কিছু শেয়ার স্ত্রী শিরিন আক্তারের নামে পবির্তন করার কথা ছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। তবে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ৫ আগস্টের আগেই রতন দেওয়ান দেশ ছেড়েছেন তাঁর স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে।

রতন দেওয়ানের হয়ে কালিয়াকৈরে ব্যবসা দেখাশোনা করতেন তাঁর ছোট ভাই স্বপন দেওয়ান। বাসায় গিয়ে তাঁকেও পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদ ইউনিয়নের বিধাই গ্রামে সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের পরিবারের ছয় বিঘা জমি রয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলে, ওই গ্রামের আবদুল মোতালেবের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাঁচ-ছয় বছর আগে জমিটি কেনা হয়। পরে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামরুল ইসলাম জমি দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন। বছরে এক-দুবার জমি দেখতে আসতেন হারুন অর রশীদ। শ্রীপুরের ভাংনাহাটি গ্রামে এক আত্মীয়ের নামে ‘সবুজপাতা’ নামে তাঁর আরো একটি রিসোর্ট রয়েছে। টঙ্গীর সাতাইশে মৌজায় নির্মাণাধীন জেএইচ-জিওটেক্স লিমিটেড গার্মেন্টসে এবং ছায়াকুঞ্জের গুশুলিয়া মৌজায় ১২ বিঘা জমিতে হারুন ও তাঁর পরিবারের নামে নির্মাণাধীন আবাসিক হোটেলের কথা বলা হলেও এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুত্র: কালের কন্ঠ

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram