বিরামপুরে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত উদ্ভিদ জাতীয় আগাছা পার্থোনিয়াম
মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা বিরামপুরে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত উদ্ভিদ জাতীয় আগাছা পার্থোনিয়াম। বিষাক্ত উদ্ভিদটি বিরামপুর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের টাটাকপুর এলাকার দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের পাশে দেখা মিলেছে। এছাড়াও পাশে সীমান্তবর্তী উপজেলা হাকিমপুরে (হিলি) ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগাছাটি অত্যন্ত ভয়ংকর। গবাদিপশু চরানোর সময় গায়ে লাগলে পশুর শরীর ফুলে যায়। এছাড়াও তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। আর পশুর পেটে গেলে কেমন বিষক্রিয়া হতে পারে তা অনুমেয়। বিশেষ করে গাভী পার্থেনিয়াম খেলে দুধ তিতা হয়। ওই দুধ অনবরত কেউ খেলে সেই মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
শুধু পশুই নয়, আগাছাটি মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে চুলকে লাল হয়ে ফুলে যায়। ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকে এমনকি মারাও যেতে পারেন। গণমাধ্যম মারফত জানা যায়, ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় ১২ জন মানুষ মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। এতসব ভয়ংকর বিষয় জানতে পেরে পরিবেশবিদরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এ উদ্ভিদের বিষয়ে। আতঙ্কিত হয়েছেন উপমহাদেশের কৃষিবিদরাও। তারা এটিকে বিষাক্ত আগাছা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এটি শুধু বিষাক্তই নয়, যেকোনো ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতিও করে। ফসলের জমিতে এর বিস্তার ঘটলে প্রায় ৪০ শতাংশ ফসল কম ফলে।
জানা যায়, আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ পার্থোনিয়াম যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচতে সক্ষম। বিশেষ করে ফসলের খেত কিংবা রাস্তার দুধারে এ আগাছাটি বেশি জন্মে। এটি বেশি নজরে পড়ে সীমান্তবর্তী জেলার রাস্তার দুধারে। এ ছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলায় কমবেশি দেখা যায়। তবে বাংলাদেশে এখনো ফসলের খেতে দেখা যায়নি।
এ গাছ সাধারণত এক থেকে দেড় মিটার উচ্চতার হয়। অসংখ্য শাখা ত্রিভুজের মতো ছড়িয়ে থাকে। ছোট ছোট সাদা ফুল হয়। ঠিক যেন ধনিয়াগাছের ফুল। হঠাৎ করে দেখলে যে কেউ ভুল করবেন ধনিয়াগাছ ভেবে। গাছটির আয়ুষ্কাল মাত্র তিন-চার মাস। এ আয়ুষ্কালের মধ্যে তিনবার ফুল ও বীজ দেয় গাছটি। ফুল সাধারণত গোলাকার, সাদা, পিচ্ছিল হয়। এ গাছ তিন-চার মাসের মধ্যে ৪ থেকে ২৫ হাজার বীজ জন্ম দিতে সক্ষম।
এসব ক্ষতিকর দিক পর্যালোচনা করে কৃষিবিদরা গাছটিকে পুড়িয়ে ফেলতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সতর্ক না হলে যেকোনো ব্যক্তি বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন-এটি কেউ কাটতে গেলে ওই ব্যক্তির হাতে-পায়ে লাগতে পারে। পোড়াতে গেলে ফুলের রেণু দূরে উড়ে বংশবিস্তার করতে পারে। আবার ব্যক্তির নাকে-মুখেও লাগতে পারে। তাতে তিনি মারাত্মক বিষক্রিয়ায় পড়তে পারেন। এ ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রথমে গাছটিকে কাটতে হবে। হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা থাকলে ভালো হয়। অবশ্যই পা ভালোমতো ঢেকে রাখতে হবে। মোটা কাপড়ের প্যান্টের সঙ্গে বুটজুতা পরা যেতে পারে, সঙ্গে মোটা কাপড়ের জামাও পরতে হবে। গাছকাটা হলে গভীর গর্তে পুঁতে ফেলতে হবে। এ ছাড়াও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় আগাছানাশক ব্যবহার করে এ গাছ দমন করা যায়।
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, উপজেলার যে সমস্ত জায়গায় উদ্ভিদ জাতীয় বিষাক্ত আগাছা পার্থোনিয়াম দেখা যাবে সে এলাকাসহ উপজেলার সকল কৃষককে এ বিষাক্ত আগাছার ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং আগাছা দমন করতে হবে।