মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ডাকাত আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতা রফিক উদ্দিনকে (৪৫) হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তিনি উপজেলার ১৬ নং সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য। রফিক উদ্দিন সাহেরখালী ইউনিয়নের মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১২ জন। শনিবার রাত দেড়টায় মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল জোন-২ এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার সামনে এই ঘটনা ঘটে।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা গিয়ে কারখানার ভেতর থেকে লাশ ও আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।আহতরা হলেন- সাজ্জাদ হোসেন (২১), নুরুল করিম (২৮), সাইদুল (২২), আবদুর রহিম (২৬), নুরুজ্জামান (২৭), আবু তালেব (৩২), শহীদুল ইসলাম (৪৫), জহির (১৭), শহিদুল ইসলাম (২৮), আকবর হোসেন রনি (২২)। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সাহেরখালী ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি ছিল বিএনপি সাহেরখালী ইউনিয়নের। আমরা প্যাকেট করার সময় রাতে বিএনপি নেতা রফিক উদ্দিনের নম্বরে একজন কল দিয়ে জানান, সাহেরখালী ইউনিয়নের স্লুইস গেট এলাকায় ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে; নেবে কিনা। পরে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সেখানে যান। সেখান থেকে ফেরার সময় অর্থনৈতিক অঞ্চলের এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার সামনে এলে তাদের ডাকাত আখ্যা দিয়ে ঘিরে ফেলেন কারখানার লোকজন ও স্থানীয়রা। এ সময় তারা রফিক মেম্বারসহ তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের গণধোলাই দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমি রাতে রফিক মেম্বারের নম্বরে ফোন দিলে অপরিচিত এক ব্যক্তি রিসিভ করেন। আমি রফিক মেম্বারের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, জঙ্গলে আছেন। তুমি কে; বলে কল কেটে দেন। পরে বিষয়টি মিরসরাই সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে জানাই। সেনাবাহিনী রাতে না যাওয়াতে রবিবার সকাল ৮ টায় আবার কল দেই। প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২ টায় এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার ভেতর যাই। এসময় রফিক উদ্দিন হাত-পা, চোখ বাঁধা ও মৃত অবস্থায় এবং অন্য নেতাকর্মীদের গুরুতর জখম অবস্থায় পাই। এরপর তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। আহতদেরকে নির্মমভাবে প্রহার করা হয়েছে। তাদের বহনকারী তিনটি সিএনজি-অটোরিকশাও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দাবি করেন, শনিবার রাত দেড়টায় দূরের একটি মৎস্য প্রকল্পে হানা দিয়ে ফেরার পথে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ১৪-১৫ জনের একটি ডাকাত দল আমাদের কারখানায় ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মীরা অ্যালার্ম বাজাই। এতে আশপাশের কারখানার লোকজন ও রাতে খালে মাছ ধরতে আসা মানুষ তাদের ধাওয়া দিয়ে গণধোলাই দেয়। এসময় উত্তেজিত জনতা ডাকাতদের ব্যবহার করা তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জ্বালিয়ে দেয়। পরে আহত লোকজনকে উদ্ধার করে আমরা কারখানার ভেতরে রাখি। রবিবার সকাল সাড়ে ১২টার দিকে আহতদের স্বজনরা কারখানায় ঢুকে তাদের নিয়ে যায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেন।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী দাবি করেন, রফিক উদ্দিন বিএনপির দুর্দিনের নিবেদিত নেতা। তাকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যা করেছে। আহত করেছে দলীয় অনেক নেতাকর্মীকেও। হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক সিফাত সুলতানা জানান, রবিবার দুপুর দেড়টায় রফিক উদ্দিন নামে একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের জখম রয়েছে। এসময় গুরুতর আহত অবস্থায় আরও ১০ জনকে আনা হয়। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসময় তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জোরারগঞ্জ থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি কারখানায় মারামারি ঘটনা শুনেছি। রফিক উদ্দিন নামে নিহত একজনের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
এদিকে রবিবার দুপুরে কারখানা এলাকা পরিদর্শন করেন মিরসরাই সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেনেন্ট কর্নেল আল মামুন, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজর আমিন।
লে. কর্নেল আল মামুন বলেন, এসকিউ কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছি।