নুরুল আলম সাঈদ, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি: বান্দরবান পার্বত্য জেলার মায়ানমার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার স্পর্শকাতর ঘুমধুম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডস্থ তুমব্রু বাজার পাড়া লাগোয়া বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত তথা তুমব্রু খালের অব্যাহত ভাঙ্গনে কোনার পাড়ার প্রায় ৫০টি পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢলে ও নদীর পানির খরাল গ্রাসে সীমান্তবাসীর জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জীবন যাত্রা হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। বিগত ২১আগষ্টের অতিবৃষ্টি, পানির উজানের ঢল, পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহিত স্রোতের তুড়ে সীমান্ত খালের বাংলাদেশ অংশের তুমব্রু ও কোনার পাড়ার অধিকাংশ স্থানে ভেঙ্গে গেছে।
অপরদিকে মিয়ানমারের অংশ ভরাট হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাদেশের অংশে ভাঙ্গনের ফলে মায়ানমারের অংশে চর জেগে উঠেছে। বাংলাদেশ অংশের খালের পাড় ভেঙ্গে বসত ভিটে হারানোর উপক্রম হয়েছে। এতে পরিবার গুলোতে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে জরুরী ভিত্তিতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে কোনার পাড়ায় বসবাসরত প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার ভিটা-বাড়ি ছাড়া হওয়ার আশংকা করছেন। বিগত জুলাই ও আগষ্ট মাসের বন্যা ও অতিবৃষ্টি, পানির উজানী ঢ্ল, পাহাড়ি পানির স্রোতের তুড়ে তুমব্রু, লামার পাড়া, কোনার পাড়ার অধিকাংশ ঘরে পানি প্রবেশ করে। ওই সময় প্রবল পানির কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই এলাকার হত দরিদ্র লোকজন। এসব ক্ষতির ক্ষত শোকাতেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে ভোক্তভোগী পরিবার গুলোকে।
তুমব্রু কোনারপাড়ার বাসিন্দা মৃত আবুল কাশেমের ছেলে নুরুল বশর(৪০) তুমব্রু বাজারের চটপটি-ফুসকা বিক্রেতা। পরিবারে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, দুই সন্তান ও এক ভাইয়ের পরিবার-পরিজনের মাথা গোজাঁর একমাত্র সামান্য বসতভিটা ও একই আঙ্গিনায় দুটি বাড়ি। তৎমধ্যে নুরুল বশরের ঘর সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়ির একটি কক্ষের মাটি সরে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ির দুই পাশের টেকসই ওয়ালের মাটি সরে গেছে। বসতভিটার গাছ-পালা উপড়ে গেছে। প্রায় পরিবার এমন বন্যা পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। বর্তমানে ঘরে থাকা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ফের যদি সীমান্ত খালের ভাঙ্গন শুরু হয়, তাহলে নুরুল বশররের বাড়িটি চিরতরের জন্য খালে বিলিন হয়ে যাবে। নুরুল বশরের মতে আরো প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার ভাই খাইরুল বশর, মাষ্টার খাইরুল বশর, সিএনজি চালক ইমাম শরীফ কৃষক জাফর আলম ফকির, খাইরুল ইসলাম লালু, অটো রিক্সা চালক নুরুল বশর, হাসান আলী কালু, নুরুল কবির, সুলতান আহমদ, শাহ আলম, মায়া খাতুন, মো. আলম, আব্দুল মোনাফ, দিল মোহাম্মদ সহ প্রায় ৫০ পরিবার। বৃষ্টির পানি, উজানী ঢ্ল, পাহাড় থেকে নেমে আসা স্রোতের প্রবাহিত পানির কবল থেকে সীমান্ত খালের ভাঙ্গন রোধ এবং কোনার পাড়া রক্ষায় দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বসতবাড়ি ও ভিটে মাঠি নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত নুরুল বশর দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলেন, চটপটি-ফুসকা বিক্রির আয়ে ৫/৬ জনের সংসার চলে টেনে-টুনে। একমাত্র সহায় সম্বল বসতভিটে ছাড়া কিছুই নেই।বাড়িটিও আধা ভাঙ্গা হয়ে গেছে। ভিটার গাছ-পালা, ক্ষেতখামার সব পানিতে ডুবে তলিয়ে গেছে। কিছু উপড়ে গেছে।বাড়ির ভিতর ভয়ংকর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যেন বসবাস করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন চোখে-মুখে কিছুও দেখ ছিনা। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার’কে বলেছি।
ঘুমধুম ইউপির ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, কোনার পাড়ার পরিস্থিতি ভালো না। খালের ভাঙ্গনে বিলিন হওয়ার পথে প্রায় ৫০টি পরিবার। এসব পরিবারের ভিটে বাড়ি রক্ষায় খালে টেকসই বাধ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ইউপি) একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, তুমব্রু কোনার পাড়ায় ভাঙ্গন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। দেখা যাক সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তবে আপাততে ঘুরে দাড়াতে ক্ষতিগ্রস্ত ভিটে-বাড়ি ও অবশিষ্ট গাছ-পালা রক্ষায় নিজেদের অর্থায়নে সাধ্যমত কাজ করছেন তারা।