হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বয়স্কভাতা এবং টিআর কাবিখা-কাবিটা সহ বিভিন্ন সরকারি অর্থ অবৈধভাবে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালীর হাতিয়ায় উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে।
বৃৃৃৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে সোনাদিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের স্লুইস গেটের উপর গিয়ে দেখা যায়, ৫০-৬০জন নারী-পুরুষ সহ জড়ো হয়ে আছে। সাংবাদিক দেখে এগিয়ে এসে উক্ত ওয়ার্ডের মেম্বারের অনিয়মের বিরুদ্ধে মিছিল শুরু করে দেয়।
তারা জানায়, ২০১৭ সালে সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে নদী ভাঙন প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন মানুষদের তালিকা করা হয়। সেই তালিকা থেকে ৪নং ওয়ার্ডের ৩২জনের নামে ঘর বাবদ প্রায় ৭৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ আসে। টাকা উত্তোলনের জন্য উত্তরা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মেম্বারের বাড়িতে নিয়ে সুবিধাভোগীদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। আর যারা স্বাক্ষর দিতে জানেনা তাদের হাতের উপরে হাত রেখে জিল্লু মেম্বার নিজে স্বাক্ষর করে দেন। স্বাক্ষর নেওয়ার পরেও তারা কোন টাকা না পাওয়ায় মেম্বারকে প্রশ্ন করলে তিনি গড়িমসি করেন। পরে ওই সকল মানুষষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য কালাম মাঝি, আলা উদ্দিন মাঝি, ফরহাদ, তাজু মাঝি সহ কয়েকজনকে তার বাড়িতে নিয়ে ডেকে ১৫ হাজার টাকা করে দেন। বাকি টাকার বিষয়ে তারা জানতে চাইলে জিল্লু মেম্বার বলেন, আপাতত এগুলো নেন পরে আবার টাকা আসলে পাবেন।
স্থানীয় মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি বরাদ্দের টাকার বাহিরেও কার্ড করে দেওয়া, ঘর করে দেওয়া, সালিশ মীমাংসা, নাগরিক সনদ দেওয়ার নামে সেবা প্রত্যাশীদের থেকে টাকা চাওয়া, টিআর, কাবিখা-কাবিটা, সরকারি চাউল আত্মসাৎ, চোরাই গরু ক্রয়-বিক্রয় সহ এমন কোন অপকর্ম নেই যে জিল্লু মেম্বার করেনি। কোন মেয়ের বিয়ের সময় জন্মনিবন্ধনের জন্য গেলে বয়স কম আছে বলে অভিভাবকদের থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করতো। এহেন কর্মকান্ডে তার ওয়ার্ডের লোকজন অতিষ্ঠ।
ভুক্তভোগী কালাম মাঝি বলেন, সাবেক নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান থাকাকালীন আমাদের নদীভাঙা পরিবারকে ঘর দেওয়ার জন্য তালিকা করেন, এর মাঝে নতুন চেয়ারম্যান আসার পর আমাদের ঘরের টাকা আসলেও আমাদেরকে তা জানানো হয়নি। পরে একদিন মেম্বার বললো আপনাদের টাকা আসছে উত্তরা ব্যাংকের চেক স্বাক্ষর দিতে হবে। আমরা তার বাড়িতে গিয়ে ব্যাংকের লোকজনের সামনে স্বাক্ষর দিই। টাকার কথা বললে বলে চেক পাশ হয়ে আসলে পাবে। সরকার পতনের পর আমরা এটা নিয়ে কথা বললে মেম্বার রাতে কল দিয়ে আমাদের ৪জনকে ডেকে ১৫ হাজার টাকা করে দেয়। বাকি টাকা পরে আবার দেওয়া হবে বলে। এখন কল দিলে বলে টাকা পাবেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক বৃদ্ধ বলেন, আমি স্বাক্ষর দিতে পারিনা, জিল্লু মেম্বার আমার হাত ধরে নিজে স্বাক্ষর করে দেয়। আমাদের কয়েকজন কিছু টাকা পেলেও আমিসহ আরো অনেকে এক টাকাও পাইনি। আমরা এটার বিচার চাই।
রাকিব উদ্দিন নামের একজন বলেন, আমাকে সরকারি ঘর দিবে বলে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে ঘর তো দেয় নাই। ফোন দিলেও ফোন ধরে না। একই ভাবে দেলওয়ার হোসেন উকিল ও জসীম উদ্দিন বলেন, বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিবে বলে আমাদের থেকে দুই হাজার টাকা করে নিয়েছেন। কাগজপত্র নিয়েছেন কিন্তু কার্ড করে দেন নাই। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই।
অভিযুক্ত ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার জিল্লুর রহমানকে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন লোকজনের থেকে কোনো টাকা নেইনি কিংবা কোনো টাকা ফেরত দেই নাই। সব ডকুমেন্ট ব্যাংকে আছে। একটা চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
এ সকল বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শুভাগত বিশ্বাস এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি হাতিয়া উপজেলায় এসেছি বেশিদিন হয়নি তাই এখানে কোন কোন প্রকলল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তা আমার জানা নেই । তাছাড়া আমি ছুটিতে আছি, অফিসে আসলে আপনাকে পূর্বের ফাইল গুলো দেখে জানাব।