চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের চিলমারীতে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের ঘরের বরাদ্দ দিতে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। ঘরের নাম করে উৎকোচ নেয়ার পর ঘর না পাওয়ায় হতাশ গৃহহারা ওই মানুষজন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল নয়ারহাট ইউনিয়নের খাউরিয়ারচর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে। প্রকল্পের ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরও গৃহহীনদের কাছে হস্থান্তর না করায় তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রকল্পের ৮০টি ঘর।
জানা গেছে, উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ খাউরিয়ারচর এলাকায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধিনে গুচ্ছগ্রাম ২য় পর্যায়(সিভিআরপি) প্রকল্পের আওতায় ৮০ঘরের একটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের কাজ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তত্ত্বাবধানে চর প্যাটার্নের ওই ৮০টি ঘর নির্মাণ করতে ব্যায় হয় প্রতিটি ঘর ২লক্ষ ৪৮হাজার ৬০০টাকা হারে মোট ১কোটি ৯৮লক্ষ ৮৮হাজার টাকা। গৃহহীন ৮০টি পরিবার থাকার জন্য গুচ্ছগ্রামে পৃথক পৃথক ৮০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও অজানা কারনে ঘরগুলি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। এদিকে স্থানীয় গৃহহীন মানুষ ঘরের বরাদ্দ নিতে গেলে জনপ্রতিনিধিরা ব্যবসা খুলে বসেছেন বলে অনেকে জানান। ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে কয়েকজন ইউপি সদস্যের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের নিকট থেকে বিভিন্ন পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়াসহ নদের দুটি পয়েন্টের খেয়া ঘাট নিয়ে বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও অজানা কারনে হস্থান্তর না করায় তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে ঘরগুলি। এসময় দক্ষিণ খাউরিয়া এলাকার ফাতেমা বেগম বলেন, তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর হামিদ মেম্বার তার নিকট ১৫হাজার টাকা দাবী করেন। নিরুপায় হয়ে মেম্বারকে ১৩হাজার টাকা দেন তিনি, এখন তিনি ঘর এবং টাকা কোনটিই না পেয়ে হতাশ।
ইদ্রিস আলীর স্ত্রী কবিলা বেগম (৫৫) জানান, তিনি আশ্রয়ণের ঘর পেতে কালা চান মেম্বারকে ১৫হাজার টাকা দিয়েছেন। ঘর না পেয়ে টাকাটা ফেরত চাচ্ছেন তিনি তাও দিচ্ছে না বলে জানান ওই নারী। আলিফ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে শরিফ মন্ডল বলেন, তিনি দুইটা ঘরের জন্য চেয়ারম্যানের লোকা জহুরুল বিদেশীর নিকট ৪২হাজার টাকা দিয়েছেন। এখন টাকাটাও ফেরত পাচ্ছি না ঘরও পাচ্ছি না। মৃত-চান মিয়া সরকারের ছেলে মো.শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি একটি ঘরের জন্য আসাদ চেয়ারম্যানকে ১৭হাজার টাকা দিয়েছেন। নায়েব আলী হোসেন জানান, তিনি ১৫হাজার টাকা দিয়েছেন। এছাড়াও জয়নাল আবেদীন নামের এক ব্যাক্তি অভিযোগ করে বলেন, এলাকায় দুইটি ঘাটের জন্য আমি এবং আমার অংশীদার মিলে আসাদ চেয়ারম্যানকে ৭০হাজার টাকা দিয়েছি। এখনও আমার ঘাটের কোন কাগজপত্র আমাকে দেয়নি। জনগণ আমাকে নৌকা বাইতে দেয় না। নৌকা বাইয়ে সংসার চালাই, এখন আমি কি করি?
নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, গুচ্ছগ্রামের ঘরের বিষয়ে আমি কোন সুবিধা নেইনি। আমার ভাল কাজের জন্য ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব অভিযোগ দিচ্ছে তারা।
প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো.মোশারফ হোসেন বলেন, স্থানীয়দের মধ্য থেকে ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন নেয়া হচ্ছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হবে।
সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার নঈম উদ্দীন বলেন, আমি কয়েকদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।