খাগড়াছড়িতে চোর সন্দেহে পিটুনিতে এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার পর পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ কেন তিন পার্বত্য জেলা এমন অশান্ত হয়ে উঠল সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিন পাবর্ত্য জেলায় সেনাবাহিনীর বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই সংঘাত নিরসনে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য জেলাগুলোর পাড়া মহল্লায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের নিয়ে বৈঠক করছে জেলা প্রশাসন। খবর বিবিসি বাংলার।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, দীঘিনালায় বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছে। যে কারণে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। এই পরিস্থিতিরি জন্য একে অপরকে দায়ী করছে পাহাড়ি ও বাঙালি সংগঠনগুলো।
স্থানীয়দের দাবি, বিভিন্ন সময় নানা কারণে পার্বত্য তিন জেলার সংঘাত সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটলেও এবারের পরিস্থিতি হঠাৎই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দাবি, পার্বত্য শান্তিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ের এই সংকট সহজে কাটবে না।
যদিও পার্বত্য অঞ্চলের একটি বাঙালি সংগঠন হঠাৎই পাহাড় অশান্ত হওয়ার পেছনে অন্য রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে দাবি করেছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেছেন, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ বাঙালিদের কেউ কেউ তিন চারটি দোকান ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
উপজেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী দীঘিনালার লারমা স্কয়ার বাজারের ওই ভয়াবহ আগুনে অন্তত ১০২টি দোকান পুড়েছে। যার মালিকানা রয়েছে বাঙালি ও পাহাড়ি উভয়ের।
গত কয়েকদিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভাঙা মূর্তির ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল। যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছিল সারাদেশে।
এসব গুজবের প্রসঙ্গ তুলে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক বলেছেন, গুজব মারাত্মক সন্ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি জানান, এই ঘটনায় যারা এসব গুজব ছড়িয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উস্কে দিয়েছে তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে গোয়েন্দা সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দীঘিনালার ঘটনার রেশ খাগড়াছড়ি ও তিন পার্বত্য জেলায় ছড়িয়ে পড়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ চারজন উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এলাকায় আসেন। এসময় জেলা প্রশাসন, পাহাড়ি, বাঙালি বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকও করেন তারা।
পার্বত্য অঞ্চলে সম্প্রীতি রক্ষা ও সংঘাত সহিংসতা এড়াতে এসব এলাকায়, পাড়ায়-মহল্লায় পাহাড়ি-বাঙালি মিলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সম্প্রীতি সভা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সিনিয়র সহসাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলোকে উস্কে দেয়। সম্প্রীতি বজায় রাখতে হলে এটি বন্ধ করতে হবে।