রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলায় ঢাকা কলেজের এইচএসসির (বিজ্ঞান বিভাগ) ছাত্র হাসনাতুল ইসলাম ফাইযারসহ ৭ জনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিকে ফাইযারের বয়স এখনো ১৮ বছর হয়নি, অর্থাৎ সে ‘শিশু’ বলে দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা ও তার আইনজীবী।
গতকাল শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার এই রিমান্ডের আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানা, দনিয়া ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এরফান ওরফে রোকন, ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য মো. আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, মো. সৌরভ মিয়া ও মো. তারেক হোসেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে আসা ফাইযারের মামা হাসনাইন বলেন, তার ভাগ্নে পুলিশ হত্যা সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাকে গত বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়। সে ডেমরার কোনাবাড়ীস্থ সামসুল হক খান স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছে। তার জন্মতারিখ ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। সে অনুযায়ী এখনো তার ভাগ্নের বয়স ১৮ হয়নি। হাসনাইন এ সময় ফাইযারের জন্মসনদও দেখান উপস্থিত সাংবাদিকদের। তিনি বলেন, একটি শিশু হওয়ার পরও আদালত ফাইযারের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এ বিষয়ে ফাইযারের আইনজীবী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, আমরা আদালতে শিশু প্রমাণের জন্য শিক্ষাসনদ ও জন্মসনদ দাখিল করে ফাইযারকে শিশু হিসেবে গণ্য করে শিশু আদালতে শুনানির জন্য আবেদন করি। কিন্তু আদালত আমাদের কোনো কথাই শোনেননি। বেআইনিভাবে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলায় ফাইযারের বয়স ১৮ বছর বলে উল্লেখ করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫৮) পরিবারসহ মাতুয়াইল মাতৃসদন হাসপাতালের বিপরীত পাশে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। গত ১৯ জুলাই রাত আনুমানিক ৯টায় গণভবনে সরকারি ডিউটি পালনের উদ্দেেেশ তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলযোগে বাসা থেকে বেরিয়ে যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজের উত্তর পাশে আসা মাত্রই সাড়ে ৯টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতারা বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে উল্লিখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকের প্ররোচনা ও নির্দেশনায় পরস্পর যোগসাজশে পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত হয়ে দেশে নাশকতা সৃষ্টির অংশ হিসেবে তাকে আটক করে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুরুতর আঘাত করে। মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রাস্তায় পড়ে গেলে আসামিরা অন্যদের সহযোগিতায় লোহার রড, লাঠি দিয়ে পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের নাক-কান, মুখমণ্ডল, গলা ও হাত, বুক, পেট, পিঠ, ডান পায়ের হাঁটুর নিচেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে। ঘটনাস্থলে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে রশি দিয়ে ফুটওভার ব্রিজের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। মৃত্যুর পর মরদেহ নিয়ে উল্লিখিত আসামিরা ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা পৈশাচিক আনন্দে মেতে ওঠে এবং মরদেহ গুম করতে মরদেহে আগুন লাগিয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করে। গত ২৪ জুলাই নিহতের ভগ্নিপতি ফজল প্রধান এ মামলা দায়ের করেন।