ঢাবি প্রতিনিধি: ভারতের কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে এক নারী ডাক্তারকে ধর্ষণের ঘটনায় সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশের নারী শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘আওয়াজ তোলো নারী’ এর ব্যানারে এ মানববন্ধন করেন তারা।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর মেডিক্যালে ঢুকে ধ্বংসযোগ্য চালিয়ে সকল ধরনের প্রমাণ ধ্বংস করা হয়৷ বাহিরের কথা বাদ দিলেও, আমাদের দেশে তনু, মুনিয়ার বিষয়েও আমরা কোনো বিচার পাইনি। সাড়ে চার হাজার ধর্ষণ মামলার মধ্যে হাতে গোনা চার পাঁচ টা মামলার বিচার হয়েছে। আমাদের দাবি, স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা যেখানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি, সেখানে নারীদের জন্য বিচার চাই, আইন ও তার প্রয়োগ চাই।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলেয়া তাহমিম বলেন, আমরা আজকে বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে ইন্ডিয়ার কথা বলছি, এটা আমার কাছে আইরনি লাগতেছে। সেখানে অন্তত বিচার বিভাগ ও পুলিশের কিছু স্বাধীনতা আছে ধর্ষণের নিরপেক্ষ বিচার করা। কিন্তু গত পনের বছর ধরে আমাদের দেশে পুলিশ বা বিচার বিভাগের এই ধরনের স্বাধীনতা ছিলো না। আমার জানা মতে কখনোই ছিলো না। গত ক্ষমতাসীন সরকার ধর্ষকদের বিচার করার চাইতে শেল্টার দিয়েছে বেশি।
সেনানিবাসে তনু ধর্ষণের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে দেশের সেনাবাহিনীর এক চতুর্থাংশ সেনা সদস্য মোতায়েন থাকে, সেখানে কীভাবে ধর্ষণ? এর দায় যদি সেনাবাহিনী না নিয়ে বলে, আমরা এ বিষয়ে জানি না। তাহলে এর চাইতে আইরনি আর কিছু হতে পারে না। ধর্ষণের মামলার ঘটনায় ধর্ষিতাকে সেনসেটিভ প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করে তোলে, যার ফলে এক পর্যায়ে ভিক্টিম মিমাংসা করতে বাধ্য হয়। এমনটি দেখা গেছে, আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলের ঘটনায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লামিশা জামাল বলেন, আমাদের দেশে ধর্ষণের ঘটনা এতোই বেশি যে একটি ঘটনা বলতে গেলে আরেকটি ঘটনা মনে করতে পারি না। সিলেট এমসি কলেজের ধর্ষণের ঘটনায় নিউজ দেখলাম, সেখানে চারটি নিউজ চার রকম। কিন্তু কোনোটাই ধর্ষকদের দিয়ে ভালোভাবে লেখা হয়নি। কেনো হচ্ছে এসব? সাড়ে চার হাজার মামলা দাখিল করা মামলা থেকে পাঁচটি মামলার ন্যায়বিচার পায় না। আমাদেরকে বলা হয়, মেয়েদের সেল্ফ ডিফেন্স শিখতে হবে, কারাতে শিখতে হবে। আমাদের এসব বিষয়ে সরকারি, বেসরকারি নানান সেমিনার করা হয়। কিন্তু ছেলেদের নিয়ে কয়টা সেমিনার হয়েছে, যেখানে মেয়েদের শরীরটাকে মেয়েদের শরীর না ভেবে মানুষের শরীর ভাববে, আমি মেয়ে হওয়ার আগে মানুষ। আসুন শুধু আইন ও বিচার বিভাগের দিকে না তাকিয়ে থেকে, নিজ নিজ জায়গায় থেকে আওয়াজ তুলি ধর্ষকদের বিরুদ্ধে, হেনস্তারকারীদের বিরুদ্ধে।
এসময় শিক্ষার্থীরা - 'কলকাতা টু বাংলাদেশ, উই ওয়ান্ট জাস্টিস','জাস্টিস ফর আর জি কর, জাস্টিস ফর মৌমিতা','ধর্ষকের শাস্তি একটাই, মৃত্যুদন্ড ছাড়া কথা নাই','প্রশ্ন যখন স্বাধীনতা,বাংলা জুড়ে ওয়াদ্দেদার' ইত্যাদি লেখা প্লেকার্ড প্রদর্শন করেন।