কলকাতা মেট্রোতে দুই নারীর মধ্যে উত্তপ্ত তর্কবিতর্কের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যা দেশে ভাষা এবং পরিচয় নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভিডিওটিতে ইতিমধ্যে ৮৫ হাজারের বেশি ভিউ হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভিড়ে ঠাসা মেট্রো কামরায় এক নারী অন্য এক নারীকে বলছেন, 'আপনি বাংলা বলতে জানেন, কিন্তু ভারতে বসবাস করেও হিন্দি বলতে জানেন না কেন? আপনি বাংলাদেশে নয়, ভারতে রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ ভারতেরই একটি অংশ এবং আপনাকে অবশ্যই হিন্দি শিখতে হবে'। চুপ করে থাকেনি দ্বিতীয় নারীও । পাল্টা জবাব দেন, 'আমি পশ্চিমবঙ্গে থাকি, আপনার জায়গায় নয়'। প্রথম নারী তখন ব্যঙ্গ করে বলেন, 'এই মেট্রো এবং পশ্চিমবঙ্গ আপনার নয়'। উত্তরে দ্বিতীয় জন আবার বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গও আমার, মেট্রোও আমার। আমার দেওয়া করের টাকায় এটা তৈরি করা হয়েছে। আপনার টাকা দিয়ে নয়'। এরপর প্রথম নারীকে দ্বিতীয় নারী মামলা করার হুমকিও দেন। সেই ভিডিওই এখন ভাইরাল। এই ভিডিওকে কেন্দ্র করে রীতিমতো সরগরম নেটদুনিয়া। যিনি ভিডিও এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন, সেই অভিনব লিখেছেন, 'হিন্দি আমাদের জাতীয় ভাষা নয়। সত্যি কথা বলতে, ভারতে কোনও ভাষাকেই জাতীয় ভাষা মর্যাদা দেওয়া হয়নি। এই ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো ও অন্য ভাষাকে উপহাস করা বন্ধ করা উচিত'। কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, 'অন্য রাজ্য থেকে পরিযায়ী হিসেবে যারা আসেন, তাদের বাধ্যতামূলক স্থানীয় ভাষা শেখানো উচিত।
দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গে এইসব মানুষদের সহ্য করা হচ্ছে। ওরা প্রকাশ্যে স্থানীয় মানুষদের ব্যঙ্গ করে, স্থানীয় ভাষা শিখতে চায় না। মহারাষ্ট্রের মতো অপারেশন দরকার'। বাংলাপক্ষের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় এই ভিডিও প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের ৭টি জায়গা থেকে এধরনের খবর আমাদের কাছে এসেছে। যেখানে বাংলাবিদ্বেষী মনোভাব স্পষ্ট। পশ্চিম বর্ধমানে এক বৃদ্ধকে যশ যাদব নামের বিহার রাজ্যের এক বাসিন্দা হিন্দি না বলার জন্য হেয় করেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা এই ধরনের কাজ করছেন তারা হয় গুজরাট, রাজস্থান বা বিহারের বাসিন্দা। দক্ষিণ ভারত বা অন্য কোনো রাজ্যের বাসিন্দারা এরকম আচরণ করেন না’। গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের আরো অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এবিষয়ে কোনো পদক্ষেপ করছে না। উল্টে মেট্রোর ভিডিওটি কেন ভাইরাল হলো সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতার হেস্টিংস থানার পুলিশ। উত্তর পূর্ব ভারতের মানুষকে যেখানে চীনা বললে তোলপাড় পড়ে যায়, সেখানে কলকাতার পুলিশ সব জেনেও কোনো অভিযোগ নিতে চায়নি। গর্গের দাবি, ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিল অনুসারে, হিন্দি ও বাংলা সহ ২২টি স্বীকৃত ভাষার সমান মর্যাদা রয়েছে। দেশের জাতীয় ভাষা হিন্দি যারা বলেন এই কথাটাই সম্পূর্ণ ভুল।
সূত্র : আজ তাক বাংলা