হঠাৎ করে পাল্টে গেলো সবকিছুই। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর একে একে ফিরে আসতে শুরু করেন নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষগুলো। বছরের পর বছর ধরে যে পরিবারগুলো প্রিয়জনের ফিরে আসার আশায় বুক বেধেছিল, তাদের স্বপ্নও সত্যি হতে শুরু করে।
২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে নিখোঁজ হন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা। ওই সময় দেশজুড়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। ৫ বছর ৪ মাস পর সেই মাইকেলই জীবিত অবস্থাতেই স্বজনের মাঝে ফিরে আসেন। কোথায় কেমন ছিলেন তিনি?
তাদের যে জায়গায় রাখা হয়েছিল সেই জায়গাটি ‘আয়নাঘর’ নামেই বহুলভাবে পরিচিত। মাইকেল চাকমার সাথে সঙ্গে আলাপ হয় । সেখানে তিনি তার দুর্বিষহ সময়ের বর্ণনা করেন। তিনি জানান, তাকে তুলে নেয়ার পর যে চোখ বাঁধা হয়েছিল এরপর ৫ বছর ৪ মাসে কোনো আলো দেখতে পাননি। প্রায় দেড় মাস শুধু ভাত খেয়ে সময় কাটিয়েছেন। আর যে তরকারি দেয়া হতো তাতে অনেক ঝাল দেয়া হতো।যদি ঝাল কমিয়ে দিতে বলা হতো তাহলে আরও বেশি ঝাল দেয়া হতো বলেও জানান তিনি।
আয়নাঘরের সেলগুলোর বর্নণা দিতে গিয়ে তিনি জানান, ওখানের যে কক্ষগুলো রয়েছে সেখানে বাইরের কোনো আলো ঢুকে না। বড় মোটরের ফ্যান অন করে রাখা হতো। আর সেখান থেকে অনেক আওয়াজ হতো। শব্দে ঘমানো যেতো না। এটি তাদের অত্যাচারের কোটা অংশ। আর ঘুমিয়ে থাকলেও দরজায় আওয়াজ করে জাগিয়ে দেয়া হতো বলেও জানান মাইকেল।
তার মতো আরও অনেকের সাথেই গোপন বন্দীশালায় দেখা হয়েছিল মাইকেলের। এ বিষয়ে তিনি জানান, বন্দী থাকার কিছুদিন পর তাকে অন্য একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে সাঈদুল নামে একজনের সাথে তার দেখা হয়েছিল। সাইদুলের বাড়ি রংপুর এলাকায়। মাইকেল সাইদুলকে তার বাড়ির ফোন নম্বর মুখস্থ করিয়েছিলেন। যাতে ছাড়া পেলে পরিবারকে তার বিষয়ে কিছু জানাতে পারে। অনেকবার বলার পর নম্বরটা মুখস্থও করেছিল সাইদুল। তবে নম্বরের একটা ডিজিট ভুল বলেছিল সে। এই ভুলটা না হলে তার পরিবার হয়তো আয়নাঘরে থাকা অবস্থায়ই তার কথা জানতে পারতো। সাইদুল যাওয়ার পর তার সেলে আরও একজনকে আনা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
যেদিন মুক্তি পান তিনি সেদিনও জানতেন না যে তিনি পরিবাররের কাছে ফিরছেন। এ বিষয়ে মাইকেল বলেন, লুঙ্গি, গেঞ্জি পড়া অবস্থায়ই তাকে একটি গাড়িতে তোলা হয়। তখন সেখান থেকে একজন তাকে জিজ্ঞেস করেছিল সে নাস্তা করেছে কিনা। সে তখন বলেছিল আমি নাস্তা করিনি। তখন একজন তাকে বলেছিল তোমাকে ছেড়ে দেয়া হবে বাসায় গিয়ে পরিবারের সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নিও।
মাইকেল চাকমা আরও জানান, গাড়িতে করে তাকে একটা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সে বুঝতে পেরেছিলো এটি পাহাড়ি এলাকা। একপর্যায়ে তাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। তাকে বলা হলো রাস্তার একপাশে শুয়ে পড়তে এবং আধা ঘণ্টার আগে উঠার চেষ্টা না করতে। আর যদি উঠে তাকে গুলি করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। গাড়িটি চলে গেলে হাত খুলে উঠে বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়।