দেশের একমাত্র সরকারি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনে প্রয়োজন হবে ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন বিদেশি অংশীদার খুঁজছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে সরকার সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও জাপানের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছে বলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
পরিশোধনাগার ইআরএল ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামে তৈরি হয়।
প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১৫ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। এটি পরিচালনা করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনে থাকা বিপিসি। নতুন প্রকল্পে ৩০ লাখ টন সক্ষমতার আরেকটি ইউনিট করার কথা। ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’ নামের প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১২ সালে।
কিন্তু সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নেওয়া প্রকল্পটির কাজ এক যুগেও শুরু করা যায়নি। পরিশোধনের সক্ষমতা না বাড়ায় বেশি পরিমাণে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এতে প্রতিবছর বাড়তি ডলার খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। এই বাড়তি ব্যয় অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করছে বলে জানান জ্বালানি খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড-২ প্রকল্পটি বিপিসি এবং এস আলম গ্রুপ যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এস আলম গ্রুপের সঙ্গে রিফাইনারি নির্মাণ প্রস্তাব বাতিল করেছে সরকার।
গত ২৯ আগস্ট জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের জন্য এস আলমের সঙ্গে হওয়া সরকারের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এর পর থেকেই সরকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নতুন অংশীদার খুঁজছে। সে লক্ষ্যে আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও জাপানের সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে জ্বালানি বিভাগ।
এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আনুমানিক ব্যয় হবে ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পের একটি অংশ বিপিসি নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করবে। বিপিসি তার তহবিল থেকে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে। বাকি অর্থ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে সংগ্রহ করা হবে। জ্বালানি উপদেষ্টার নির্দেশ অনুসারে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আগামী বছরের শুরুতে দরপত্র আহবান করার পরিকল্পনা করছি।’
পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির তুলনায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করা হলে ব্যয় ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৯ থেকে ১০ ডলার কম হয়। সে হিসাবে রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে বছরে আরো ৩০ লাখ টন তেল পরিশোধন করা গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফ হাসনাত বলেন, ‘ইআরএল ইউনিট-২-এর জন্য আমরা একটি বাস্তবসম্মত ব্যয়ে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রস্তুত করছি, যাতে যোগ্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আকৃষ্ট করা যায়।’
গত ১৫ নভেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান চট্টগ্রামে ইস্টার্ন রিফাইনারিটি পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময়সভায় বলেন, ‘ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আরো একটি তেল শোধনাগার হবে। দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগারটি পুরনো হয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে এটি ভেঙে পড়তে পারে। তাই ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এত দিন দুর্বৃত্তায়নের কারণে ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি।’
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭২ লাখ মেট্রিক টন। মোট চাহিদার প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেলই ব্যবহার হয়। বাকিটুকু চাহিদা পূরণ হয় পেট্রল, অকটেন, কেরোসিন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলে।
জানা গেছে, বর্তমান ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করেছিল ফ্রান্সের কম্পানি টেকনিপ। ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের ডিজাইনও তৈরি করেছে ফ্রান্সের এই প্রতিষ্ঠানটি। ডিজাইন অনুযায়ী, এই প্রস্তাবিত পরিশোধনাগারে কয়েক ধরনের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করা যাবে।