দুর্যোগ মোকাবেলা যাদের কাজ, সেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নিজেই ধুঁকছে বহু বছর। প্রতিষ্ঠার ৫২ বছরেও তাদের সক্ষমতা বাড়েনি। লোকবল ও যানবাহন সুবিধা অপ্রতুল। দেশের ৪৯৫ উপজেলায় একজন করে কর্মকর্তা এবং একজন অফিস সহকারী দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
নেই কোনো যানবাহন সুবিধাও। এতে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি ব্যাহত হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশে ৪৯৫ উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম রয়েছে। তারা মোটাদাগে ১৭ ধরনের সরকারি কর্মসূচি বা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করে থাকে।
ঝড়, বন্যা, জলচ্ছ্বাসসহ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলা, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহনির্মাণ, গ্রামীণ রাস্তায় সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ, কাঁচা রাস্তায় হেরিং বোন বন্ড (ইটের রাস্তা) নির্মাণ, ঝড়, বন্যাপ্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, টিসিবির পণ্য বিক্রিসহ সামাজিক নিরাপত্তার নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সাতজন এবং উপজেলা পর্যায়ে জনবল আছে মাত্র দুজন। ৪৯৫ উপজেলার কোথাও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গাড়ির সুবিধা নেই।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপজেলা পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের মাঠ পর্যায়ে ছোটাছুটি করতে হয়।
দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর কী অবস্থা, সেগুলোর ধারণক্ষমতার বাস্তব চিত্র জানার জন্যও আমাদের সরেজমিনে যেতে হয়। বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার তৎপরতাও চালাতে হয়। কিন্তু সারা দেশের কোনো উপজেলাতেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য যানবাহনের সুবিধা রাখা হয়নি।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দুর্যোগপ্রবণ দেশ হওয়ার কারণে প্রায়ই আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে হয়। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে ত্রাণ রাখার জন্য কোনো গোডাউন নেই।
সম্প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে গত ১৯ আগস্ট রাজধানীর মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করে। সেগুলোর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়ন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পদের আপগ্রেডেশন এবং পদনাম পরিবর্তন, উপজেলা পর্যায়ে জনবল বৃদ্ধির দাবি উল্লেখযোগ্য।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের দাবি আদায়ে সম্প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ সমন্বয় কমিটি গঠন করেছেন।
এই কমিটির প্রধান সমন্বয়ক এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাদের যাত্রা শুরুর পর থেকে ৫২ বছর ধরে একই পদে কাজ করতে হচ্ছে। কোনো আপগ্রেডেশন হয়নি। ফলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের পদবৈষম্য প্রকট হয়েছে। আমরা এই বৈষম্য নিরসনের দাবি তুলেছি।’
ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে অনেক সরকারি অফিসের চেয়ে আমাদের কাজের কলেবর বেশি। নিয়মিত অনেকগুলো কাজ করতে হয়। কিন্তু জনবল না থাকায় এসব কর্মকাণ্ড চালাতে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘পুরো বিষয়ের সমাধানে আমাদের কাজ চলছে। আশা করি, দ্রুতই বিষয়টির সুরাহা হবে। গত ১০ বছরে যেসব ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, সেগুলোও বের করেছি। এখন আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে কাজ শেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যাবে অনুমোদনের জন্য।’