ঢাকা
৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যা ৭:১১
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪

বাতিল হতে পারে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎচুক্তি

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে অসম বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে শুরু থেকে নানা ধরনের তর্কবিতর্ক রয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আদানি। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২৫ বছরমেয়াদি এ চুক্তির মাধ্যমে মুনাফা বৃদ্ধির বিশেষ সুযোগ নিয়েছে ভারতীয় কম্পানিটি। অন্তর্বর্তী সরকার আদানি গ্রুপের সঙ্গে এই অসম বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা করছে।

অন্যদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা আদানির সঙ্গে করা চুক্তি দেশের স্বার্থে বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শতভাগ রপ্তানির জন্য নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতেও বিক্রির সুযোগ রেখে বিদ্যুৎ রপ্তানি বিধি সংশোধন করেছে দেশটির সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা বলছেন, ভারত সরকার আদানির বিদ্যুতের বিষয়ে তাদের আইন সংশোধন করেছে। এখন আদানি ইচ্ছা করলে ভারতের গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে।

এর মাধ্যমে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারণ আদানির বিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিডে দিতে হলে আমাদের সঙ্গে নেগোশিয়েট করতে হবে। আদানি যদি এমন প্রস্তাব নিয়ে আসে তাহলে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা সহজ হবে। কারণ আদানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আমাদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে।

কর্মকর্তারা আরো বলছেন, আদানির সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) যে পিপিএ (পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি) স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেখানে বলা আছে, কোনো কিছু পরিবর্তন করতে গেলে দুই পক্ষের সম্মতি নিতে হবে। এখন যখন তারা আমাদের সঙ্গে বসতে আসবে, তখন আমাদের পক্ষ থেকে বের হওয়ার বিষয়টি জানানো হবে। তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু না হওয়ার আগে যদি আদানির বিদ্যুৎ আমদানি বন্ধ করা হয় তাহলে উত্তরবঙ্গের বিরাট অংশে লোডশেডিং বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় আদানি গ্রুপ এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে।

বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বিপিডিবি। দুই ইউনিটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কেনা হবে। চুক্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পুরো চুক্তিই এমনভাবে সাজানো, যাতে আদানি গ্রুপ সুবিধা পায়। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতি তিন মাস পর কত বিদ্যুৎ নেবে, তা আগেই ঘোষণা করতে হবে।

যদি বাংলাদেশ এর চেয়ে কম বিদ্যুৎ নেয়, তাহলেও ঘোষিত পরিমাণের সমান দাম পরিশোধ করতে হবে। চুক্তিতে এমন অনেক শর্ত রয়েছে, যেগুলোর কারণে ২৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাবে আদানি।

অথচ বাংলাদেশে যেসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সেগুলোর কাছ থেকে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু বিদ্যুৎ নেয় বিপিডিবি। এ জন্য তিন মাস আগে চাহিদা পাঠাতে হয় না।

এদিকে আদানির চুক্তিতে শুল্ক কর বিষয়ে অনিয়ম রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (সিআইআইডি)। গত ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া তদন্ত কমিটির অনুসন্ধান ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিসহ বিশেষ বিধানে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি যাচাই-বাছাই করতে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অসম চুক্তির কারণে ক্যাপাসিটি পেমেন্টও বেশি দেওয়া হচ্ছে আদানিকে। আদানির বিদ্যুতে ইউনিটপ্রতি শুধু ক্যাপাসিটি পেমেন্টই পড়বে প্রায় ছয় সেন্ট, যা দেশীয় মুদ্রায় সাত টাকা ২০ পয়সা। সে হিসাবে বছরে আদানি শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে নেবে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের গ্যাসভিত্তিক ও তেলভিত্তিক বেসরকারি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের গড় ইউনিটপ্রতি ক্যাপাসিটি চার্জ ৯০ পয়সা থেকে এক টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক এবং জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিটি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। একই সঙ্গে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আমাদের জন্য কতটুকু প্রয়োজন, তাও দেখা দরকার। যদি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আমাদের জন্য সাশ্রয়ী না হয়, তাহলে চুক্তিটি পর্যালোচনা করে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে দুই পক্ষের সম্মতিতে চুক্তিটি পুনরায় সংশোধনও করা যেতে পারে।’

ড. ইজাজ হোসেন আরো বলেন, ‘আমাদের অন্যান্য কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মতোই একই দামে আদানির বিদ্যুৎ আমরা পাচ্ছি। আমাদের সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানি সংকটে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ ২০ টাকার বেশি, সেখানে আদানির বিদ্যুৎ আমরা ইউনিটপ্রতি প্রায় ১২ থেকে ১৩ টাকার মধ্যে পাচ্ছি।’

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘আদানির চুক্তি বাতিল করতে হবে। এই চুক্তির সবখানে বাংলাদেশের হার হয়েছে।’

এদিকে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ প্রায় ৮০ কোটি ডলার পাওনা আদানি গ্রুপ। এ অর্থ দ্রুত পরিশোধের জন্য সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি লিখেছেন গ্রুপটির চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। এরপর কদিন আগে ১৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে।

২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ আদানির বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিষয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। মোদির সফরের দুই মাস পর আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বিপিডিবি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram