‘সুখে ভরবে আগামী দিন, পেনশন এখন সর্বজনীন’ এই স্লোগান নিয়ে প্রৌঢ় জীবনকে সুখী ও স্বস্তিদায়ক করতে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছিল পতিত শেখ হাসিনার সরকার। প্রথম দিকে ব্যাপক সাড়া পেলেও বর্তমানে গ্রাহকদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। ফলে ভবিষ্যতে কর্মসূচিটির সফলতা নিয়ে সংশয়ে আছেন নিবন্ধনকারী গ্রাহকরা। তবে সরকার জানিয়েছে, সাময়িক স্থবিরতা কাটিয়ে কর্মসূচিটি চালু থাকবে এবং আরও কিছু নতুন সুবিধা যুক্ত করা হবে।
পেনশন কর্তৃপক্ষের মতে, সরকার পরিবর্তনের পর প্রচারণা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় এনরোলমেন্ট কমে গেছে। বর্তমানে নতুন করে প্রচারণার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দেশব্যাপী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পোস্টার বিতরণসহ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব স্তরের মানুষকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম (ইউপিএস) জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই লক্ষ্যে, পেনশন স্কিমে বার্ষিক মুনাফা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর অক্টোবরের মধ্যে জমানো অর্থের ওপর কমপক্ষে আট শতাংশ মুনাফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের (এনপিএ) সদস্য গোলাম মোস্তফা জানান, প্রচারণার অভাবে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমেছে। প্রচারণা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বার্ষিক মুনাফা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। স্কিমকে গতিশীল করতে নতুন ফিচার যুক্ত হলে গতি আরও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এনপিএ সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা- এই চারটি পেনশন স্কিমে মোট ৩ লাখ ৭২ হাজার ৪৮৭ গ্রাহক তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবং প্রায় ১৩২ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছে সমতা স্কিম। এতে মোট গ্রাহকের ৭৮ শতাংশ নিবন্ধিত। মাসিক কিস্তি এক হাজার টাকা, যার মধ্যে ৫০০ টাকা গ্রাহক এবং বাকি ৫০০ টাকা সরকার প্রদান করে। মোট নিবন্ধিত সংখ্যা ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ এবং জমা হয়েছে ৪১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য রয়েছে প্রগতি স্কিম। এতে ২২ হাজার ৪১০ জন গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন এবং ৪৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা জমা হয়েছে। প্রবাস স্কিম বিদেশে কর্মরতদের জন্য। নিবন্ধন করা ও চাঁদা দেওয়ার দিক থেকে বেশি পিছিয়ে প্রবাসীরা। এই স্কিমে ৯১০ জন নিবন্ধিত এবং চাঁদা জমা ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
সুরক্ষা স্কিম স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য, যেখানে ৬৩ হাজার ১৭৪ জনের চাঁদা জমা হয়েছে ৩৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি, যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশা। তবে এর বাইরে ‘প্রত্যয়’ ও ‘সেবক’ নামে দুটি কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছিল।
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট চালু হওয়া এই কর্মসূচির লক্ষ্য দেশের জনগণকে একটি টেকসই সামাজিক সুরক্ষাবলয়ের আওতায় আনা। জনপ্রিয়তা বাড়াতে নতুন ফিচার যুক্ত করার পাশাপাশি প্রচারণা কার্যক্রম আরও জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।