৫২ মাস ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন দেশের বিভিন্ন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ পাওয়া ৭৩৮ জন শিক্ষক। চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও ৫২ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকার আগারগাঁওয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে গত ২০ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কষ্টে থাকা এসব শিক্ষক। গতকালও তারা বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
আন্দোলনকারী কয়েক জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে ৭৩৮ জন শিক্ষক ৫২ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। অতীতে তিন দফায় একই দাবিতে রাজপথে নেমেছিলেন তারা। তিন বারই সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এবারও আশ্বাস পেয়েছেন, কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে আন্দোলনকারীরা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আজিজ তাহের খানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরদিন ২২ অক্টোবর ভোরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় মহাপরিচালক অধিদপ্তর থেকে বের হন।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই ধাপে সরকার ‘স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (এসটিইপি)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে সরকার দুই ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। ২০১৯ সালের জুন মাসে সেই মেয়াদ শেষ হয়। ঐ বছরের ৩০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই কারিগরি শিক্ষকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য লিখিত নির্দেশনা দেয়। শিক্ষকেরা বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পের অধীনে নিয়োগ করা শিক্ষকদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে সম্মতি দেন। পাশাপাশি এসব শিক্ষকের ২০১৯-২০ অর্থবছরের বেতন সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া ও তাদের রাজস্ব খাতের প্রক্রিয়াধীন শিক্ষক হিসেবে অভিহিত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এসব শিক্ষককে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে বন্ধ হয়ে যায় তাদের বেতন-ভাতাও।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একজন রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত বিপুল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজিজ তাহের খান এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমদ মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমরা পেটের ক্ষুধার জন্য এখানে এসেছি। আমরা বলেছি, শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। এর আগে বারবার আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু বেতন পাইনি। এবার লিখিত কাগজ পাওয়ার পর আমরা কর্মস্থলে ফিরব।’
শিক্ষকরা জানান, কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার বকেয়া বেতন-ভাতা ও চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয়ে জানানো হলেও আশানুরূপ কোনো সুফল না পাওয়ায় গত ২২ সেপ্টেম্বর ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পৃক্ততায় এক দিনের মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ৩০ সেপ্টেম্বর সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলন করা হয় এবং দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারা বলেন, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সমন্বয়হীনতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দীর্ঘসূত্রতা এবং দীর্ঘ ৫২ মাস বেতনবিহীন অবস্থায় ও চাকরি রাজস্বকরণে দেরি হওয়ায় শিক্ষকরা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন এবং চরমভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ পলিটেকনিক টিচার্স ফেডারেশন (বিপিটিএফ) গতকাল ২০ অক্টোবর থেকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
এ ব্যাপারে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজিজ তাহের খান গতকাল বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে আমাদের দিক থেকে কোনো ঘাটতি নেই।’