ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই দলটি নেতৃত্বশূন্য। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্নে একাধিক ‘শর্ত’ জুড়ে দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ।
শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকালে বাংলা একাডেমির সাহিত্য বিশারদ আব্দুল করিম মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের প্রশ্নে তিনি এমন শর্ত দেন।
সোহেল তাজ বলেছেন, ‘যারা হত্যা, গুম, খুনের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেবে এবং আওয়ামী লীগ যখন পরিষ্কার হবে, তারপরে তারা যদি চায় আমি নেতৃত্বে আসি, তখন বিবেচনা করব তার আগে নয়।’
ঐতিহ্য প্রকাশনীর আয়োজনে কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আহমাদ মোস্তফা কামালের সঞ্চালনায় ‘শতাব্দীর কণ্ঠস্বর তাজউদ্দীন আহমদ: কন্যার চোখে, পুত্রের চোখে’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক সোহেল তাজের কাছে জানতে চান আওয়ামী লীগের হাল কি তাজউদ্দীন পরিবার বা সোহেল তাজ ধরবেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু দায় আওয়ামী লীগ মেনে না নিলে এ দলের নেতৃত্বে আসার প্রশ্নই উঠে না।’
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্ন তখনই আসবে যখন সংগঠন হিসেবে আত্মসমালোচনা শুরু করবে, আত্মোপলব্ধি করবে। তাদের কর্মকাণ্ডগুলো যখন স্বীকার করবে, যারা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে তারা জবাবদিহি করবে।’
সোহেল তাজ আরও বলেন, ‘ক্ষমতার প্রতি আমার মোহ নাই, আমাদের পরিবার সবসময় গণমানুষের সেবায় বিশ্বাসী। আমার বাবার একটা গুণাবলী ছিল ভালো জিনিস শেখা, আর সেটা প্রয়োজন হলে শত্রুর কাছ থেকে হলেও শেখা। নীতি ও আদর্শ যাই থাকুক উনি সবার কাছ থেকে ভালো কিছু শেখার চেষ্টা করতেন। তিনি যে মাপের নেতা ছিলেন সেটা আর কারো মধ্যে খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি। তার নেতৃত্বের অনেক গুণাবলি ছিল, তিনি বিচক্ষণ ছিলেন। মানুষকে আপন করে নেওয়া, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের দূরদর্শিতা তার মধ্যে অনেক বেশি ছিল।’
তিনি জানান, আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংগুলোতে বারংবার তাজউদ্দীন আহমেদ বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। তার বাবা দুর্নীতি ও দলীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
সম্প্রতি প্রথম আলো পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা শারমিন আহমেদ বলেছেন, “আওয়ামী লীগের উচ্চ মহল, শেখ হাসিনার আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে আমি, সোহেল—আমাদের কাছে ফোনকল এসেছে। তাঁরা জানতে চেয়েছেন, আওয়ামী লীগের হালটা ধরব কি না। আমি তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি যে ’৭৫–পরবর্তী সময়ে জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। তখন কিন্তু আওয়ামী লীগের অবস্থা এখানকার চেয়ে অনেক ভালো ছিল।
আমার মা যখন আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন, তখন আওয়ামী লীগের প্রায় সবাই তৃণমূলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা মানুষ। আমার মায়ের কথা ছিল, যোগ্য, মেধাবীদের ছাত্রলীগে রিক্রুট করো। কিন্তু সংগঠনে কে আসবে, কে আসবে না, তা নিয়ে তিনি কোনো হস্তক্ষেপ করতেন না। ফলে সংগঠনে মেধাবী তরুণেরা আসতে শুরু করল। কিন্তু এর পরিণতি কী হলো? আম্মা যখন আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে আসতে শুরু করলেন, দলকে একটা শক্ত জায়গায় নিয়ে এলেন তখন কী হলো? আব্দুর রাজ্জাক সাহেবরা দিল্লি থেকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে এলেন। এরপর আওয়ামী লীগ আর দলের থাকল না। পরিবারের হয়ে গেল।
আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র পছন্দ করি না। কেউ যদি নতুন আসে, আমরা তাদের জন্য কাজ করব, তাদের গাইড করব। কিন্তু তাজউদ্দীনের সন্তান হিসেবে আমরা রাজনীতিতে আসতে চাইব না।
যাঁরা ফোনকল করেছেন, আমি তাদের বলেছি, আপনারা আবার তাজউদ্দীনের পরিবারের কাছে আসছেন! আপনারা নিজেরা দলকে ধ্বংস করে এখন চাচ্ছেন আবার আমরা আসব, দলকে গড়ে দেব। এরপর আপনারা ফিরে এসে সেটার ফল নেবেন? এবার আমরা এই অবস্থান নিয়েছি যে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে অনুশোচনা আসুক, আত্মোপলব্ধি আসুক। জনগণের কাছে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রত্যেক আহত ব্যক্তির কাছে, প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবারের কাছে গিয়ে পা ধরে মাফ চাইতে হবে। যে টাকা বিদেশে পাচার করে নিয়েছেন, সেটা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।”