ঢাকা
১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৮:৫৪
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ১০, ২০২৪

চা দোকানি থেকে ১১ তলা ভবন ও ৭ মেডিকেল সেন্টারের মালিক বশির

নিজের গ্রামে এক সময় টংদোকানে চা বেচতেন মোহাম্মদ বশির ওরফে কালু। কিন্তু এ দিয়ে তার হতদরিদ্র সংসারের নিত্য টানাপোড়েন মেটেনি। পরে ভাগ্য ফেরানোর আশায় শ্রমিক ভিসায় পাড়ি জমান সৌদি আরব। পরে দেশে ফিরে শুরু করেন আদম ব্যবসা। জনশক্তি রপ্তানি খাতে একচেটিয়া ব্যবসায় মাত্র এক দশকে ফুলেফেঁপে ওঠে তার সম্পদ। চাওয়ালা থেকে রীতিমতো শিল্পপতি বনে যান বশির।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল নামে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স পাওয়ার পর বশিরকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। আওয়ামীঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসাবে জনশক্তি খাতে রীতিমতো মাফিয়া বনে যান বশির। এক পর্যায়ে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক পাঠানোর একচেটিয়া ব্যবসা চলে যায় তার কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া আলোচিত মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটে যোগ দিয়ে তিনি হাজার কোটি টাকা লুটে নিতে সক্ষম হন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু রাজধানীতেই ডজনখানেক বাড়ি, মেডিকেল সেন্টার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বশিরের অঢেল সম্পদ রয়েছে। এছাড়া দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে বিশেষ করে সৌদি আরবে ব্যবসা রয়েছে তার। তবে আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের পতন হলে বিপাকে পড়েছেন বশির। তার বিরুদ্ধে জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেট তৈরি এবং হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়। এরপর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। বর্তমানে আড়ালে থেকেই মামলা থেকে বাঁচতে নানা প্রভাবশালী মহলের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন।

সম্পদের পাহাড়

বনানীর সি ব্লকের ৪ ও ৬ নম্বর রোডে ৩০ নম্বর প্লটে ১১ তলা সুবিশাল অট্টালিকার মালিক বশির। এখানে রয়েছে রাব্বি ইন্টারন্যশানালের সদর দপ্তর। এছাড়া নাফা মেডিকেল সেন্টারসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় এ ভবন থেকে। বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে এটি নাফা টাওয়ার নামে পরিচিত।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বাইরে নাফা মেডিকেল সেন্টার নামের সাইনবোর্ড ঝুলছে। এতে লেখা জিসিসি কর্তৃক অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার। এখানে সৌদি আরব, ওমান, বাহরাইন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ভবনের দুদিকের প্রবেশপথে পোশাকধারী নিরাপত্তা প্রহরী দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের অনেকে এখানে এসেছেন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য।

রিপন মিয়া নামে একজন জানান, তিনি সৌদি আরব যেতে চান। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এখানে এসেছেন। তার কাছ থেকে ফি নেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ টাকা।

এদিকে রাজউক বলছে, ভবনটি অবৈধ। নির্মাণকালে অনুমোদিত নকশার কোনো কিছুই মানা হয়নি। মাত্র ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে অবৈধভাবে ১০ তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়। এ সময় ভবনের চারপাশে প্রয়োজনীয় খালি জায়গা (সেটব্যাক) রাখা হয়নি। এমনকি আবাসিক হিসাবে অনুমোদন নেওয়া হলেও ভবন ব্যবহার হচ্ছে পুরোপুরি বাণিজ্যিক কাজে। এসব অনিয়মের কারণে ভবনের অবৈধ অংশ অপসারণে একাধিক চিঠি দেয় রাজউক। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে এসবের কিছুই আমলে নেয়নি মালিক পক্ষ। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ফের চিঠি দিয়েছে রাজউক।

১৫ অক্টোবর রাজউকের অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ কায়সার পারভেজ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, মোহাম্মদ বশির গংয়ের নামে একটি বেজমেন্টসহ ৬ তলা আবাসিক ইমারতের লে-আউট নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু বর্ণিত ইমারত পরিদর্শনে দেখা যায় অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে ১০ তলা নির্মাণ করা হয়েছে। উপরন্তু আবাসিক হিসাবে অনুমোদিত ভবনটি পুরোপুরি বাণিজ্যিক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমতাবস্থায় পত্র জারির তারিখ থেকে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে অবৈধ কাঠামো ভেঙে অপসারণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

তবে শুধু বনানীতে সুবিশাল ভবন নয়, রাজধানীর প্রগতি সরণি প্রধান সড়কসংলগ্ন জগন্নাতপুরে পাশাপাশি ৩টি বাড়িতে ঝুলছে রাব্বি ইন্টারন্যাশনালের সাইনবোর্ড। এর মধ্যে প্রধান সড়ক থেকে জগন্নাদপুরে ঢোকার মুখে একটি দোতলা বাড়িতে (হোল্ডিং নম্বর ক-৪৩/৪) রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং মেডিকেল সেন্টার। এছাড়া ক-৪০/২/এ নম্বর হোল্ডিংয়ের একটি তিনতলা ভবনের নিচতলায় মার্কেট এবং ওপরে কয়েকটি মেডিকেল সেন্টার করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জগন্নাতপুর ও ভাটারা এলাকায় একাধিক মূল্যবান প্লট ও বাড়ি কিনেছেন বশির। শুধু বালুর মাঠ এলাকাতেই তার তিনটি প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ক-৪৩/৪ নম্বর হোল্ডিংসংলগ্ন একটি প্লটে বর্তমানে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য স্টিলের কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া ভাটার থানাসংলগ্ন কাঁচা বাজারের ঢোকার মুখে বিশাল জায়গাসহ বাড়ি কিনেছেন বশির। এর বাইরে রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে সংলগ্ন স্থানীয় দড়িকান্দি মৌজায় তার বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তি রয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভুলতা ফ্লাইওভার থেকে নামতেই সাওঘাট পল্লী বিদ্যুৎ প্রকল্প। এর ঠিক বিপরীতে ১শ ফুট প্রশস্ত রাস্তার বিশাল এলাকা সীমানা প্রাচীর ঘেরা। নিচু জমির কিছু অংশ বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। বাকি জায়গায় বালু ফেলার কাজ মাঝপথে হঠাৎ করে বন্ধ। এখানে ওখানে পড়ে আছে ইট, সিমেন্টের বস্তাসহ নির্মাণসামগ্রী।

স্থানীয়রা জানান, এখানে প্রায় ৬০ বিঘা জমি রয়েছে। মোহাম্মদ বশির নামের এক ব্যাক্তি শিল্পপ্রতিষ্ঠান করবেন বলে জমি কেনেন। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ’১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এসব জমি কেনা হয়। জমি রেজিস্ট্রি হয় বশিরের স্ত্রী রোকেয়া বেগমের নামে। আগে এখানে একাধিক নিরাপত্তা প্রহরী থাকত। কিন্তু হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে নিরাপত্তাকর্মীদের আর দেখা যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। এ সুযোগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা খাতে একচেটিয়া ব্যবসা করছেন বশির। অন্তত ৭টি মেডিকেল সেন্টার রয়েছে তার। এগুলো হলো নাফা মেডিকেল সেন্টার, আল মদিনা মেডিকেল সার্ভিস, অ্যাডভান্স হেলথ কেয়ার, এম রহমান মেডিকেল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দাওয়া মেডিকেল সেন্টার। বশিরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম, মেয়ে মেহনাজ বিনতে বশির এবং ছেলে খালেদ বিন বশিরকে এগুলোর মালিক দেখানো হয়েছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram