ঢাকা
২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৪:১৫
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ১৬, ২০২৪

মন্ত্রিত্ব ছিল মুস্তফা কামালের টাকা কামানোর মেশিন

দিনমজুরের ছেলে আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) আদম ব্যবসা করে দুহাতে প্রচুর টাকা কামান। এরপর নাম লেখান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের সময় পরিকল্পনামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ছিলেন কামাল। আর এই মন্ত্রিত্বই হয়ে ওঠে তার টাকা কামানোর মেশিন। শেয়ারবাজারে লুটপাট, প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর সিন্ডিকেট, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, তদবির-নিয়োগ-পদোন্নতি-বদলি বাণিজ্যের কমিশনসহ নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। এসব অপকর্মে ভাইসহ পরিবারের সদস্যরাও ছিল তার সঙ্গী। কামালের মন্ত্রিত্বের বদৌলতে তার ভাইও হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন। শুধু কামালই নন, তার ভাইয়ের বিরুদ্ধেও হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।

জনপ্রিয়তা না থাকলেও মুস্তফা কামাল এমপি হয়েছেন পাঁচবার; রাজনৈতিক কূটকৌশলে অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা দূরের কথা, দলের প্রথম সারির অনেক নেতাও তার সঙ্গে দেখা করতে হিমশিম খেতেন। তার নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে একটি কথা প্রচলিত ছিল যে, ‘লোটাস কামালের চেয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা বরং সহজ এবং স্বচ্ছ নির্বাচন হলেও তিনি মেম্বার পদেও হারবেন।’ ঢাকায়ও তার কাছে কোনো নেতাকর্মী পারতপক্ষে আসতেন না। জনবিচ্ছিন্ন এই ‘জননেতা’ কিন্তু শেখ হাসিনার কাছে ছিলেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রভাবশালী মন্ত্রীও বনে যান তিনি।

জানা গেছে, পারিবারিক বৃত্তের বাইরে কাউকে নিয়ে কখনো ভাবেননি লোটাস কামাল। দলে হাইব্রিড নেতা উৎপাদনেরও অন্যতম কারিগর তিনি। ফলে নিজ দলেই তার বিরুদ্ধে চরম চাপা ক্ষোভ ছিল। অন্যদিকে কামালের নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় ভিন্ন দল ও মতের নেতাদের বিরুদ্ধে তার মদদে গত সাড়ে ১৫ বছরে হয়েছে শত শত মিথ্যা ও গায়েবি মামলা। জানা গেছে, থানায় গিয়ে মুস্তফা কামালের নাম বললেই মামলা ঠুকে দেওয়া হতো।

নির্বাচনী এলাকায় তার জনপ্রিয়তা না থাকলেও অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যেতেন কামাল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ছিলেন হয় গৃহবধূ, না হয় এলাকায় অপরিচিত কেউ। ঠিক একই পন্থায় নিজের ভাই ও ভাতিজাকে জয় এনে দিয়েছেন দুই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে। তার ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার ছিলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আপন ভাতিজা কামরুল হাসান শাহিন ছিলেন লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। কথিত আছে, শুধু ভাতিজাকে চেয়ারম্যান বানাতে লালমাই উপজেলা গঠন করেন তিনি। যে উপজেলায় লালমাই নামে কোনো মৌজাই নেই। মোস্তফা কামাল নিজে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার ছিলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আরেক ভাই মো. আবদুল হামিদ ছিলেন লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কামালের ছায়ামন্ত্রী হিসেবে পরিচিত তার একান্ত সহকারী এম সিংহ রতন ছিলেন লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ভাতিজা কামরুল হাসান শাহিন ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক। এমন পরিবারতন্ত্রের নজির দেশে আর নেই বলে মনে করেন অনেকে।

আ হ ম মুস্তফা কামালের পূর্ণ সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় তার ভাই গোলাম সারওয়ার হয়ে ওঠেন কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের ডন। মুস্তফা কামালের পর তার কথাই এখানে ছিল চূড়ান্ত। ভাইয়ের প্রভাবে প্রশাসন থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে ছিল তার একচ্ছত্র আধিপত্য। তার আধিপত্য ও দুর্ব্যবহারের কারণে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারতেন না।

মুস্তফা কামালের হয়ে গোলাম সারওয়ার ও কেএম সিংহ রতন নিয়ন্ত্রণ করতেন তার বিভিন্ন অর্থ কামানোর খাত। ভাইয়ের মাধ্যমে কবজায় রেখেছেন দলীয় পদ-পদবি। টেন্ডার, টিআর ও কাবিখা থেকে হাতিয়েছেন অর্থ। ভাইয়ের প্রভাবে সারওয়ার গোটা এলাকার দায়িত্ব নিয়ে মানুষকে শোষণ করতেন। দিনে দিনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেষ পর্যন্ত মাফিয়া ডনে পরিণত হন তিনি। তার ক্ষমতার অপব্যবহারে গোটা সদর দক্ষিণ এলাকার মানুষ ছিলেন চরম অতিষ্ঠ। সব সময় যে কাউকেই তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অপমান করতেন। তার অশোভন আচরণের কথা সর্বজনবিদিত।

স্থানীয়রা জানান, সব সেক্টরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সালিশ-দরবার, লালমাই পাহাড়ের মাটি লুট; বিনা ভোটে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার নির্বাচিত করা; সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার সভাপতি ও সদস্য নিয়োগ; বাজার কমিটি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের সব অঙ্গ-সংগঠনের পদপদবি বিক্রি; টিআর, কাবিখার অর্থ লুটপাট; বিভিন্ন বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদা আদায়সহ সব সেক্টরে দুর্নীতি ও লুটপাট করে ১৫ বছরে সারওয়ার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন। মুস্তফা কামাল এমপি হলেও নির্বাচনী এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন ছোট ভাই ও সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার।

আ হ ম মুস্তফা কামালের বাবা বাবরু মিয়া ছিলেন দিনমজুর। আদম ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত মুস্তফা কামাল রাজনীতিতে আসেন ১৯৯৪ সালে। তার বন্ধু তৎকালীন কুমিল্লা-৯ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার মারা গেলে তিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে নৌকার মনোনয়নে প্রথমবার এমপি হন তিনি। ২০০১ সালে পরাজিত হলেও, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনেকটা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন কামাল। এর মধ্যে ২০১৪ সালে আওয়ামী মন্ত্রিপরিষদের পরিকল্পনা এবং ২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে বিসিবি সভাপতি ও ২০১৪ সালে আইসিসি সভাপতি নির্বাচিত হন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই চিকিৎসার অজুহাতে পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়েন লোটাস কামাল। জানা গেছে, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে তার বিপুল বিত্তবৈভব রয়েছে।

কামালের ভাই গোলাম সারওয়ারের বাড়ি রয়েছে কানাডায়। এটা তার সেকেন্ড হোম। গত কয়েক বছর ধরে তার স্ত্রী-সন্তানরা সেখানেই থাকেন। কথিত আছে, বাংলাদেশ থেকে কানাডায় তিনি জাহাজযোগে আসবাবপত্র পাঠান। সেই সময় বিপুল পরিমাণ অর্থও পাচার করেছিলেন তিনি। সেই টাকাতেই কানাডায় বাড়ি করেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি কানাডায় পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর কয়েকদিন আগ থেকেই ছেলে সাইফ, মেয়ে সামরিন, স্ত্রীসহ কানাডায় চলে যান। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র কানাডায় চলে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, লালমাই পাহাড়ে গোলাম সারওয়ারের ৭০ বিঘা জমি, কুমিল্লায় নগরীতে কয়েকটি ফ্ল্যাট, ঢাকার গুলশানে একাধিক ফ্ল্যাট এবং একটি বাড়ি রয়েছে। সূত্র জানায়, দেশের চেয়ে বিদেশে বেশি সম্পত্তি করেছে এই পরিবার। বেশির ভাগ টাকা তারা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে।

সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইসমাইল মজুমদার বলেন, আমরা গোলাম সারওয়ারের কাছে জিম্মি ছিলাম। এখানে প্রশাসনের কোনো ক্ষমতা ছিল না। সারওয়ার যেটা বলতেন, সেটাই আইন। তার কথাই ছিল সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট, লালমাইয়ে শেষ কথা। সব সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে টাকার পাহাড় তৈরি করেছেন তিনি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আজমল হোসেন বলেন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, দলের পদপদবি বিক্রি, নিয়োগ বণিজ্য করে সারওয়ার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। ভাই অর্থমন্ত্রী থাকায় তার প্রভাবে তিনি আরও বেশি ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন। বিদেশে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন।

স্বজনপ্রীতিতে দক্ষ লোটাস কামালের কাছে গুরুত্বহীন ছিলেন দলের ত্যাগীরা। মন্ত্রিত্ব ছিল তার টাকা বানানোর মেশিন। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে গভীর সখ্য রেখে নিজের ও স্বজনের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং পাচার করেছেন। গোলাম সারওয়ার টানা ১৫ বছর বিনা ভোটে সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন।

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় কামাল নিজের চেয়ে স্ত্রী কাশমেরী কামালের সম্পদ বহু গুণ বেশি দেখিয়েছেন। গত ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় কামালের অস্থাবর সম্পদ ৪১ কোটি ৯০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। কিন্তু স্ত্রীর দেখিয়েছেন ৬২ কোটি ২৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা। নিজের স্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ২ কোটি ৩০ লাখ হলেও, স্ত্রীর রয়েছে ৫ কোটি ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও পাঁচ নাতি-নাতনিকে দান করায় সম্পদ কমেছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারের ২ কোটি ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা মেয়ে নাফিসা কামালকে এবং স্ত্রী, মেয়ে ও পাঁচ নাতি-নাতনিকে দিয়েছেন ৩১ কোটি টাকার সম্পত্তি।

সূত্র জানায়, হলফনামায় উল্লেখ করা কামালের সম্পদের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে স্বজনের নামে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তিনি।

সূত্রের দাবি, দেশে-বিদেশে মুস্তফা কামাল ও তার স্বজনের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। সরকার পতনের আগেই কামাল ব্যাংক, রাজধানীর বাসা-অফিস থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার সরিয়ে নিয়েছেন।

২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর একনেক সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাস সম্প্রসারণসহ অধিকতর উন্নয়নে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, কামাল পরিকল্পনামন্ত্রী থাকায় ওই প্রকল্প পাস হওয়ার আগেই তার ভাই গোলাম সারওয়ার দলীয় নেতাকর্মীর মাধ্যমে পাহাড়-টিলা, জঙ্গলঘেরা জমি নামমাত্র দামে কিনে পরে অধিগ্রহণের সময় চড়া দামে বিক্রি করেন। প্রায় ৪৭১ কোটি ১১ লাখ ২২ হাজার টাকায় ১৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

জানা যায়, মন্ত্রীর ভাইয়ের সিন্ডিকেট এ প্রকল্প থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোপাট করেছে। তৎকালে এ বিষয়ে ফলাও করে সংবাদ ছাপা হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, ২০১৩ থেকে গত জুলাই পর্যন্ত কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট ও আদর্শ সদর উপজেলায় মোট ৪২টি খাল খননের জন্য ১৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। মুস্তফা কামালের নির্দেশে তার সিন্ডিকেট কোনো কাজ না করেই পুরো টাকা লোপাট করেছে। এমন অভিযোগ এনে গত ১৪ অক্টোবর আদালতে মামলা করেছেন সদর দক্ষিণ জেলা কৃষক সমবায় ঐক্য পরিষদের পক্ষে সংগঠনের সভাপতি মুহম্মদ আখতার হোসাইন। এতে কামালের ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, এপিএস মিজানুর রহমান, জনপ্রতিনিধিসহ ৪৮ জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ২৫ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

২০০৯-১০ সালে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ছিলেন আলোচিত নাম। ২০১০ সালে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে ভয়াবহতম ধসের পর ২০১১ সালে সরকার প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যাংকার খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদনে কামালের তৎকালীন মালিকানাধীন সিএসএম কামাল টেক্সটাইল নামক লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের দর কীভাবে ১৬ গুণ পর্যন্ত বেড়েছিল, তার বিস্তারিত উঠে এসেছে। এই কোম্পানিটির মূল মালিকানা ছিল মুস্তফা কামালের। এভাবে শেয়ারদর বাড়াতে লোকসানি কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কোম্পানির সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের খবরে তখন শেয়ারের দর হু-হু করে বেড়েছিল।

লোটাস কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের রিক্রুটিং এজেন্সি অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ (আরএল-১১৩) এবং তার মেয়ে নাফিসা কামালের এজেন্সি অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১৪৫৭) মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এ সিন্ডিকেটের আরেক হোতা ছিলেন সালমান এফ রহমান। তাদের দৌরাত্ম্যের কারণেই ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া সরকার।

সম্প্রতি মুস্তফা কামাল ও নাঙ্গলকোট থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুলসহ ৮৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী মো. একরামুল হক মজুমদার। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নাঙ্গলকোটের আশারকোটা এলাকায় এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী। ওই সময় অভিযুক্তরা রামদা, ছেনি, পিস্তল ও লাঠিসোটা নিয়ে ককটেল ফাটিয়ে আইনজীবী ও আশপাশের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়; আমার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং আমাকে পিটিয়ে আহত করে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর করে তাদের মোবাইল ও টাকাপয়সা রেখে দেয় হামলাকারীরা।

এ ঘটনায় থানায় গিয়ে অভিযোগ করলেও তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলাম মামলা নেননি। উল্টো তিনি আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। পরে থানার ওসির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অফিস ও দোকানপাট ভাঙচুর করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করা হয়।

হাইব্রিড নেতাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, এলাকায় সভা-সমাবেশের বাইরে কোনো সময় না দেওয়া, বিভিন্ন ইউনিয়নে পকেট কমিটি করা, সাধারণ মানুষ ও নেতার্মীদের সঙ্গে যথেষ্ট দূরত্ব সৃষ্টি করে রাখা, সাধারণ মানুষের কথা না শোনায় জনগণের সঙ্গে ছিল তার চরম দূরত্ব। তার দায়িত্বের শেষ তিন বছরে তিনি একবার এলাকায় এসেছিলেন। জনগণ তার প্রতি ছিল চরম ক্ষুব্ধ।

নানা কৌশলে নাঙ্গলকোটে জামায়াত ও বিএনপির শত শত নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়েছেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই পদ-পদবি পেয়ে যান তারা। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দলীয় পদসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হয়ে যান হাইব্রিড আওয়ামী লীগ খ্যাত যোগ দেওয়া এসব নেতাকর্মী।

সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, লোটাস কামাল কখনও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। ভোট ডাকাতি করে এমপি হয়েছেন। তিনি এলাকায় পারিবারিক সিন্ডিকেট গড়েছেন। কামালের নির্দেশে গণহারে আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা-গ্রেপ্তার চলেছে। সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় গত সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শতাধিক মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়েছেন কামালের অনুসারীরা। কামালকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram