চার লেন সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ভারতে খরচ সাড়ে ১৪ লাখ ডলার। এই খরচ পাকিস্তানে ২৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, ইন্দোনেশিয়ায় ২১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, ফিলিপাইনে ১১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, চীনে ৩৯ লাখ আর তুরস্কে ১৭ লাখ ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
অর্থনীতি নিয়ে স্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশর এসব দেশের তুলনায় এত বেশি খরচে সড়ক নির্মাণ করা হলেও মান নিম্ন মানের।
সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয় এমন সব প্রকল্প গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় করা হয়েছে, এসব প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়ও বারবার বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দ আত্মসাৎ করে তা পাচারের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের পর কৃত্রিমভাবে ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়, যাতে নতুন বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করা যায়। রাজনৈতিক সমর্থক, অনুগত ও তোষণকারীরা যেন দরপত্র পায় তা নিশ্চিত করা হয়, এতে বাদ পড়ে যান যোগ্য ঠিকাদাররা। মেগা সাতটি প্রকল্প বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। তিন বার সংশোধন করে এর ব্যয় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা করা হয়। কর্ণফুলী টানেলের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৪৪৬ কোটি টাকা, যা ২ বার সংশোধন করে ১০৮৯ কোটি টাকা করা হয়। মেট্রোরেল, দোহাজারি কক্সবাজার সড়ক, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি হয়। বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সঠিকভাবে না করার ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের অপচয় হয়েছে, বেড়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ও ব্যয়। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, বিশেষত প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই তাদের মেধা বা যোগ্যতার পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ জমি ও অন্যান্য সম্পদ দখল বা কিনেছে বিগত সরকারের লোকজন। রাজনৈতিকভাবে দুর্বল বা যাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্রব নেই এমন জমির মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে, অন্যদিকে সরকারি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক দর আহ্বান না করে, অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব থাকা ঠিকাদারদের বেশি দরে সরকারি কাজের ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের জন্য কেনা গাড়ি, ভ্রমণের বাজেট ও অন্যান্য সম্পদ সংশ্লিষ্টরা নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে এবং রাজনৈতিক ফায়দা নিতে ব্যবহার করেছে। সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়া বা দ্রুত কোনো কাজ করাতে হলে সেবাপ্রার্থীদের ঘুষ প্রদান করতে হয়েছে। উন্নয়নের জন্য অভীষ্ট তহবিল নিজেদের রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক নেতারা।