কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ৩১ ভারতীয় জেলেসহ মা বাসন্তি এবং জয় জগন্নাথ নামে দুটি ট্রলিং জাহাজ নৌবাহিনীর সদস্যরা আটক করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে নৌ-বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ বিএনএস শহীদ আখতার উদ্দিন কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে নিয়মিত অভিযান পরিচালনাকালে ট্রলিং জাহাজ ও জেলেদের আটক করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে জেলেসহ ট্রলিং জাহাজ দুটি আটক করা হয় বলে জানা গেছে। আটককৃত ট্রলিং জাহাজ দুটি আজ বুধবার পায়রা বন্দর এলাকায় এনে নোঙর করে রাখা হয়েছে। জেলেদের কলাপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বানৌজা শহীদ আখতার উদ্দিনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মশিউর ইসলাম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ বানৌজা শহীদ আখতার উদ্দিন গভীর সমুদ্রে টহল প্রদান করছিল। নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ বিএনএস শহীদ আখতার উদ্দিন 'অপারেশন নির্মুল' এর আওতায় গত ১৪ অক্টোবর হতে বঙ্গোপসাগরে নিয়োজিত রয়েছে। নিয়মিত টহল চলাকালে জাহাজটির রাডারে সন্দেহজনক বিদেশী ট্রলিং জাহাজের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। নৌবাহিনীর টহল অভিযান টের পেয়ে ট্রলিং জাহাজ দুটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে নৌবাহিনীর জাহাজ শহীদ আখতার উদ্দিনের সহায়তায় ধাওয়া করে বাসন্তি এবং জয় জগন্নাথ নামে ট্রলিং জাহাজ দুটি বাংলাদেশের জলসীমার অভ্যন্তর থেকে আটক করা হয়। এ সময় ট্রলিং জাহাজ দুটি থেকে প্রায় ৫০০ মন মাছ জব্দ করা হয়। মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে বিভিন্ন এতিমখানাসহ দুস্থদের মাঝে জব্দ করা মাছ বিতরণ করা হবে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সমুদ্রসীমা ও সমুদ্র সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চতে নৌবাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আটককৃত জেলেদের কলাপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্র্রহন করা হচ্ছে। মা ইলিশ রক্ষায় ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাগর ও নদীতে ২২ দিনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।
আটক করা জেলে হলঅ- ১। বিধান দাস (৩১), পিতা- হারাধন দাস, ২। রাজেশ দাস (৩৮), পিতা- দীপাল দাস, ৩। সঞ্জিব মাতদার (৩৯), পিতা- মৃত সতোষ মাতব্বর, ৪। বিজয় দাস (৩৭), পিতা- মৃত ক্ষীরোদ দাস, ৫। কার্তিক দাস (২৫), পিতা- রায়পদ দাস, ৬। রনেশ দাস (৩৭), পিতা- সুমন্ত রাম দাস, মাতা- রায়সুনা দাস,৭। বাপ্পা সম্বার দাস (৩১), পিতা- দিলিপ সম্বার, ৮। মনোহর দাস (৪০), পিতা- মৃত কালীপদ দাস, ৯। পাঁচুগোপাল মন্ডল (২৯), পিতা- বিজয় মন্ডল, ১০। সৃজন দাস (৩২), পিতা- মৃত খিরমোহন দাস, ১১। সুরজিত দাস (৩২), পিতা- মৃত সুশিল দাস, ১২। দিলিপ খাটুয়া (৩৮), পিতা- প্রদীপ খাটুয়া, ১৩। সংকর মন্ডল (৫০), পিতা- মৃত দুছলা মন্ডল, ১৪। যাদব বসাক (৩৪), পিতা- সংকর বসাক, ১৫। হাসান আলী লস্কর (৩৪), পিতা- মৃত ঝড়আলী লস্কর, ১৬। সুবল দাস (৬০), পিতা- মৃত অবিরাম দাস, ১৭। তেজিন্দ্র দাস (৪৯), পিতা- মৃত ভোজ চরন দাস, ১৮। নিখিল দাস (৩০), পিতা- নেপুর দাস, ১৯। হৃদয় দাস (৩৪), পিতা- ভক্ত দাস, সৌরভ বিশ্বাস (১৮), পিতা- রঞ্জিত বিশ্বাস, ২১। সাগর যাদব (১৯), পিতা মৃত অজয় যাদব, ২২। আকাশ বিশ্বাস (১৮), পিতা- বিকাশ বিশ্বাস, ২৩। যগত হরি দাস (৫৫), পিতা- মৃত রজনী দাস, ২৪। সুভাষ দাস (৫০), পিতা- মৃত সতীস দাস, ২৫। রবি দাস (২৫), পিতা- মনোহরি দাস, ২৬। ভরত দাস (২৯), পিতা- হরিধন দাস, ২৭। সুকুমার দাস (৪৫), পিতা- দশোরথ দাস, ২৮। রবি দাস (৪৫), পিতা- মৃত বিরতি দাস, ২৯। নিলু মাইতি (৩০), পিতা- সন্তু মাইতি, ৩০। অনুক সাপুর (৫৫), পিতা- বঙ্কিম সাপুর, ৩১। রশিদ মোল্লা (৪৮), পিতা- রহমান মোল্লা, সবার বাড়ি কলকাতা ২৪ পরগনা ভারত।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, 'ভারতীয় এসব জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে জাল দিয়ে মাছ ধরছিল। নৌবাহিনীর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে ট্রলিং জাহাজসহ জেলেদের আটক করতে সক্ষম হয়। আটককৃত জেলেদের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ এর ২৫ (১) ও (২৮) ধারা মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।'