ঢাকা
৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১:০১
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ২৮, ২০২৪

চিন্ময় ও সনাতনী জোটের সঙ্গে ইসকনের সম্পর্ক কী?

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশ সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) ‘বহিষ্কার’ নেতা, চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ ও সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জাটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আটক করার পর বিক্ষোভের মধ্যে চট্টগ্রামে বিএনপি-জামায়াতপন্থি এক আইনজীবী নিহত হন। এ ঘটনার পর ইসকনের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশে ইসকন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তবে বৈশ্বিক ইসকন তার গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করে আন্দোলনকে রাজনৈতিক মোড় দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল।’ আইনজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটির পর বুধবার উচ্চ আদালতে ইসকন নিষিদ্ধ চেয়ে ইস্যুটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।

চিন্ময়ের সঙ্গে ইসকনের কী সম্পর্ক?

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। সম্প্রতি গঠিত বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আসল নাম ছিল চন্দন কুমার ধর। বাংলাদেশে ইসকনের সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। ভক্তরা তাকে ডাকেন ‘চিন্ময় প্রভু’ নামে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সনাতন ধর্মের নাগরিকদের অধিকার নিয়ে গঠিত জোটের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় তাকে। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। বিশেষত গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে একটি মিছিলের সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

এর আগে গত ৩ জুলাই ইসকন পরিপন্থি বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে ইসকন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি সত্য রঞ্জন বাড়ৈ তাকে সতর্ক করে চিঠি দেয়। সেখানে তার বিরুদ্ধ পাঁচটি অভিযোগও আনা হয়।

পরে গত ৯ নভেম্বর ইসকন বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস জানান সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ইসকন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিমলা কুমার ঘোষ বলেন, ‘চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সতর্কীকরণের পরও যখন কথা শোনেনি তখন তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি দলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে।’

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, বহিষ্কারের কারণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইসকনের হয়ে জনসম্মুখে বক্তব্য বিবৃতি বা ধর্মীয় কোন কাজ করতে পারবে না।

ইসকনের পক্ষ থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি চট্টগ্রামের ইসকন পরিচালিত পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষের দায়িত্বে কিভাবে থাকেন সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল ইসকনের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।

জবাবে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিমলা কুমার ঘোষ বলেন, ‘তাকে আমরা পদ পদবী থেকে বহিষ্কার করে দিতে পারি। কিন্তু তার গুরু শিক্ষা থেকে তো সরানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।’

তবে তিনি জানিয়েছেন, এরপরও যেহেতু নতুন করে তাকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আরো নতুন কোন সিদ্ধান্ত আসতে পারে দলের পক্ষ থেকে। যদিও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আটকের পর ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইসকন বৈশ্বিক প্লাটফরম।

তাদের অফিশিয়াল এক্স (পূর্বের টুইটার) হ্যান্ডেলে টুইট করে জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের সাথে ইসকনের যুক্ত থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং অত্যন্ত আপত্তিজনক।

ইসকন ও সনাতনী জাগরণ জোট

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত তিন মাসে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের ব্যানারে ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম, রংপুরে অনুষ্ঠিত হয় বিভাগীয় সমাবেশ। এই সমাবেশগুলোতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। ‘বহিষ্কৃত’ ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে এইসব সভা সমাবেশে জোটের মুখপাত্র হিসেবে সনাতন ধর্মের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে বিভিন্ন বক্তব্যও দিতে দেখা যায়।

গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে একটি মিছিলের সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহ মামলায় আটকের পর তাকে মুক্তির দাবি চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ইসকন সদস্যরাও গিয়েছিলেন।

ওই সংঘর্ষে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহতের পর এ চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের ইসকন সদস্যরাও কিছুটা বিব্রত বলেও জানিয়েছেন।

সেখানে প্রতিবাদে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসকন সদস্য বলেন, পরিকল্পিতভাবে প্রাণ নিয়ে রাজনীতি করে আমাদের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। অথচ ইসকন অহিংস প্রতিবাদ করে আসছে সব সময়।

ইসকনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিমলা কুমার ঘোষ বলেন, চিন্ময় বিভিন্ন জায়গায় যে বক্তব্য রাখছে সেটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। এর দায় নেবে না ইসকন।

তবে তাদের আন্দোলনের প্লাটফরম সনাতনী জাগরণ জোট বলছে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে মিথ্যা অভিযোগে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে।

জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সুমন কুমার রায় বলেন, আমাদের আট দফা দাবি ইসকনও সমর্থন করছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের ইসকন ফোবিয়া থাকার কারণে তারা সরাসরি অংশগ্রহণ করছে না।

এই নেতার দাবি একটা গ্রুপ ইসকনকে ঘায়েল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সেখান থেকে ইসকন-সনাতনী জাগরণ জোটকে বাংলাদেশের মানুষের মুখোমুখি দাড় করানো হচ্ছে।

ইসকন নিয়ে যা বললেন হাইকোর্ট

বহিষ্কৃত ইসকন নেতা ও সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জাটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আটকের পর তার অনুসারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংঘর্ষের সময় এক আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে।

বুধবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনির উদ্দিন বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন। পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের পদক্ষেপ জানতে চায় হাইকোর্ট।

এসময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের বক্তব্যও শোনেন। পরে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ইসকন নিষিদ্ধ ও কয়েকটি জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

অ্যাটর্নি জেনারেল এম আসাদুজ্জামান হাইকোর্টকে জানান, রাষ্ট্রের একজন আইন কর্মকর্তা নিহতের বিষয়টি রাষ্ট্র খুব গুরুত্বের সাথে দেখছে।

একই সাথে তিনি জানান, বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধ হবে কী না সেটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এ বিষয়ে এখনই হাইকোর্টকে এখনই কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার আবেদন জানান রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল।

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট বলছে, একটি নৈরাজ্যের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আদালতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

জোটের কেন্দ্রীয় নেতা সুমন কুমার রায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে ইসকন হিন্দু ভারত এই তিন ইস্যুকে এক করে একটি দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘মুসলিম সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়েই তারা ইসকনের বিরুদ্ধে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তাদের যে ব্যর্থতা সেটাকে ঢাকার জন্য ইসকনকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং চিন্ময় দাসকে আটক এই একই সূত্রে গাথা’ বলছিলেন রায়।

ইসকন কী কাজ করে?

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ হলো বৈষ্ণব মতবাদের একটি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন, যারা তাদের আধ্যাত্মিক দর্শন প্রচার করে থাকেন বলে তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে।

বিশ্বের অনেক দেশে এই সংগঠনের শাখাও রয়েছে। বিশ্বের কোন কোন দেশে ইসকন নিষিদ্ধের ঘটনাও ঘটেছে। সাম্প্রতিককালে ইসকনের বেশ কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশে নানা আলোচনাও তৈরি হয়। তাদেরকে ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন হিসেবেও আখ্যা দেয়া হয়েছে।

যদিও মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতিতে ইসকন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সনাতনী সংগঠন হিসেবে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, যেমন- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্যদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষায় কাজ করেন তারা।

ইসকন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিমলা বলেন, আমরা সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সেবামূলক কাজ করি। ইসকনকে ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সেটি তারাই দেখবেন। ওনাদের কাছে সব তথ্য আছে সেটি তারা দেখবে।

গত মাসের শেষের দিকে আট দফা দাবিতে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে একটি সমাবেশ করেছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা। সেখানে তারা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নিপীড়নের বিচার, জড়িতদের শাস্তি দেয়া, ক্ষতিপূরণ দেয়া, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করার মতো দাবি জানান।

ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, যা গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মীয় আদর্শ ও সনাতনী মূল্যবোধকে ধারণ করে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় চর্চা এবং মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা সর্বদা শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পক্ষে কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও একই আদর্শে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram