ঢাকা
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:৫১
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪

বেনাপোলে এখনও অপ্রতিরোধ্য মাদক সম্রাট বাদশা

শহিদ জয়, যশোর: যশোরের শার্শা-বেনাপোল সীমান্তের ‘কুখ্যাত মাদক সম্রাট বাদশা এখনও সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচারের গডফাদার। মাদকের ব্যবসা করে বাদশা হয়ে যায় আন্তঃদেশীয় মাদক পাচারকারীদের সর্দার। যার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে অস্ত্র ও মাদকসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনের অসংখ্য মামলা। তারপরও থেমে নেই বেপরোয়া বাদশা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সীমান্ত পার করে ভারতে পাঠিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটে নিচ্ছে। গত ২৬ ও ২৯ আগষ্ট বাদশা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা-এমপিকে শার্শার ঘিবা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকার উপরে। সীমান্তের অবৈধ পকেট ঘাট দিয়ে কুখ্যাত বাদশা সিন্ডিকেটের অবৈধ পাচার ব্যবস্যা। যশোরের আলোচিত বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেদারসে চলছে তার মাদকসহ সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচার।

শার্শা-বেনাপোল সীমান্তের অপরাধ জগতের মাফিয়া ডন মাদক সম্রাট বাদশাসহ তার অনুসারিরা। কুখ্যাত বাদশা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাচার হয় সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি সাথে অন্যান্য পণ্যের চালান। সাবেক একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই ম্যানেজ করেই বাদশা গড়ে তোলে এই পাচার সাম্রাজ্য। ২০১৮ সালে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির মাদক বিরোধী অভিযানে পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত কুখ্যাত মাদক সম্রাট বাদশা গংরা ভারতে পালিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে নাগরিকত্ব নিয়ে বিয়েও করে। এরপর অদৃশ্য ইশারায় ২০২০ সালে কুখ্যাত বাদশা ফিরে আসে। এসেই শুরু করে গাঁজার পাচার ব্যবসা। তারপর শুরু করে ফের অস্ত্র এবং ফেনসিডিল পাচার ব্যবসা। যারমধ্যে কিছুদিন জেলের ঘানি টেনে বের হয়ে স্ব-মূর্তিতে আবির্ভূত হয় কুখ্যাত বাদশা মল্লিক। মাদকসহ সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচারে হয়ে উঠে বেপরোয়া। নতুন উদ্যমে সক্রিয় হয়ে ওঠে বাদশা সিন্ডিকেট। সীমান্তে বিজিবির অভিযান অব্যাহত থাকলেও থেমে নেই বাদশা সিন্ডিকেটের মাদকসহ সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচার। অর্থের লোভে এই চক্রের সাথে যোগ দিয়েছে অনেক ছোট-বড় সিন্ডিকেটের হোতারা। মাদকের সিন্ডিকেটের হোতা হলেও বাদশা মল্লিক এখন সোনা-হুন্ডি এবং অস্ত্রের ব্যবসায়ের সাথে আওয়ামী লীগ নেতা পাচারে জড়িয়ে পড়েছে।

সীমান্তের সূত্রগুলো জানায়, বেনাপোলের রঘুনাথপুর থেকে কলারোয়া পর্যন্ত রয়েছে মাদক সম্রাট বাদশার মাদকসহ সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচারের রুট। সূত্র আরও জানায়, ফেন্সিডিলসহ মাদকের ব্যবসা করে সীমান্তের ‘কুখ্যাত ফেন্সি সম্রাট বাদশা যেমন ধনাঢ্য হয়েছে। তেমনি তার ঘাড়ে রয়েছে হত্যা মামলাসহ মাদক মামলার বোঝা। হত্যাসহ একডজন মাদক মামলার আসামি মাদক সম্রাট বাদশা। একটি মামলায় তার ৩২ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। যে মামলায় কিছুদিন কারা ভোগ করে জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে শুরু করেছে সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচারের ব্যবসা। বেনাপোল পোর্ট থানার রঘুনাথপুরের কেরামত মল্লিকের পুত্র বাদশা মল্লিক ওরফে বাদশা মিয়া। তার বিরুদ্ধে যে সব মামলা রয়েছে বিভিন্ন থানায় সে গুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বেনাপোল পোর্ট থানার মামলা নম্বর ২৬/০৮১, (২৭/১১/২০২১) ধারা-১৯-৪/১৯(এফ) ১৮৭৮ সালের অস্ত্রআইনের মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত। জিডি নম্বর-১১৮,(০৩/১১/২০২০)। এই মামলায় সে সাধারন ডায়েরীতে অভিযুক্ত। ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানার এফআইআর নং-৫০/৩৭১, (২৯/০৮/২০১৯)ধারা-৩৬(১) সারণির ১০(গ)/৪১ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ মামলায় বাদশা অভিযুক্ত।

যশোরের শার্শা থানার মামলা নং-৩৬/২৫১, (১৫/০৬/২০১৮) ধারা ৩০২/৩৪, পেনাল কোড-১৮৬০ মামলায় অভিযুক্ত। যশোরের শার্শা থানার মামলা নং-৯/২২৫, ( ১৪/০৬/২০১৭) ধারা-১৯(১)এর ৩(খ) ১০৯০ সালের মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় অভিযুক্ত। যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার মামলা নং-৪৮/৭১৩, (২৫/১১/২০১৬) ধারা-১৯(১)এর ৩(খ) ১০৯০ সালের মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় অভিযুক্ত। যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার মামলা নং-৪৯/৭১৪, (২৫/১১/২০১৬) ধারা-১৯-এর (এ) ১৯৭৮ সালের আস্ত্র আইনের মামলায় অভিযুক্ত। যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার মামলা নং-৩২, (২৮/০৫/২০০৫,) এসজিআর নং৩০/০৫, (২৫/১১/২০১৬) ধারা-২৫-এর (বি) ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় এজাহারে অভিযুক্ত। যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার মামলা নং-৪১/৫১৬, (২৪/০৮/২০১৩), ধারা-২৫-(বি)এর ২(বি) ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত। এছাড়া, বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ফেন্সিডিল সম্রাট বাদশার নামে অসংখ্য মামলা।

সূত্র আরও জানায়, কুখ্যাত বাদশা রঘুনাথপুর সীমান্তের ওপারে ভারতের আন্তর্জাতিক মাফিয়া ডন গৌতম, রবিউল, আজগার, নাসির, অপু সাহা গংয়ের সোনার চালান দিয়ে নিয়ে আসে ডলার, অস্ত্র এবং ফেনসিডিলের চালান। একইভাবে সুধীর, সাজ্জাত ওরফে সজ্জাত এবং কবীরসহ আরও কয়েকটি সিন্ডিকেট কুখ্যাত বাদশার কাছে পাইকারী ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ মাদক সরবরাহ করে। এককালের ফেন্সি ও গাঁজা সম্রাট বাদশাসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেট শুধুমাত্র টাকার লোভে এই মরণ বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশময়। কুখ্যাত বাদশার মাদকের বড় বড় চালান ছড়িয়ে পড়ছে দেশময়। অদৃশ্য কারণে, মাদক পাচারকারী কুখ্যাত বাদশাসহ তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। আর এ কারণেই সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচারকারী বাদশা সিন্ডিকেটের ক্যাডাররা ফের নতুন উদ্যোমে ব্যবসা শুরু করেছে। মাদক সম্রাট দেড় ডজন মামলার আসামী সন্ত্রাসী, এলাকার ত্রাস, বাদশা ও তার ভাই রশীদ দলবল নিয়ে গড়ে তুলেছে মাদক সিন্ডিকেট। বিভিন্ন এলাকার চোরাকারবারীদেরকে নিয়ে মাদক-অস্ত্র সিন্ডিকেট করে ভারত থেকে বেনাপোল ও শার্শার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সোনা-হুন্ডি এবং হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল-মদ-গাঁজা-অস্ত্র বাংলাদেশ অভ্যন্তরে এনে সেগুলি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছে দিচ্ছে।

দুই যুগের অধিক সময় ধরে বাদশা মাদক চোরাকারবারী করে চলেছে। মাদক চোরাকারবারী ফেন্সি সম্রাট বাদশা প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটের কাছে কয়েকবার ধরা পড়ে জেলও খেটেছে। আইনের ফাকফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে এসে আবার নেমে পড়ে মাদক রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে মাদক সম্রাট বাদশা ট্রাক ভর্তি করে ফেন্সিডিল-মদ-গাঁজা দেশের অভ্যন্তরে পাঠিয়েছে। পাঁচ বছর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালে বাদশা জীবন ভয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। সেখানে কিছুদিন পালিয়ে থাকার পর একজন বড় মাপের রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাসীন দলের নেতার সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে এসে আবারও রমরমা ভাবে শুরু করে চিরাচরিত ফেন্সিডিল ও মদের চোরাকারবার। ধুরন্দর মাদক সম্রাট বাদশা রাজনৈতিক খোলস পাল্টিয়ে সে ও তার ভাই রশীদ তাদের চোরাচালানী কার্য্যক্রম অব্যহত রেখেছে। বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে বিএনপির কর্মী সেজে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম সহ রমরমাভাবে ফেন্সি ও মদ চোরাচালান কারবার চালিয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসারপর ফেন্সি সম্রাট বাদশা ও তার ভাই রশীদ আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে মাদক চোরাকারবারী সহ এলাকায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করে। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী দখলদারীসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে গেলেও রাজনৈতিক দাপটে প্রশাসন ছিলো অনেকটা নির্বিকার। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সুচতুর মাদক সম্রাট বাদশা এবং রশীদ খোলস পাল্টিয়ে স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতাকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে গাঁজা ফেন্সি ও মদের ব্যবসা।

এ ব্যাপারে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি সুমন ভক্ত বলেন, বাদশার বিরুদ্ধে অনেক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে থানায়। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram